১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১:৫৪

দুর্নীতিলব্ধ অর্থ ভোগের সুযোগ বন্ধ করতে হবে

-আলী ইমাম মজুমদার

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে আমি বিস্মিত নই, তবে দুঃখিত। সমাজে যখন দুর্নীতিলব্ধ অর্থ ভোগের সুযোগ থাকে, তখন দুর্নীতি বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। একসময় আমরা খবর পেতাম ধনী ব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে রাখে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ধনী ব্যক্তিদের এমন বিষয় দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল। এখন শুধু সুইস ব্যাংক নয়, আরও অনেক দেশে টাকা পাচারের তথ্য প্রকাশ হচ্ছে।

কানাডায় বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম থেকে শুরু করে হাল আমলে লন্ডন ও দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের অর্থসম্পদ পাচারের খবর প্রকাশ হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে টাকা নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ একেবারেই সীমিত, আর ব্যক্তিগত সম্পদে বিনিয়োগ করার সুযোগ তো নেই। তার পরও বিশ্বের উন্নত এসব দেশে বাংলাদেশিরা কীভাবে সম্পদ কিনছেন? এসব খবরের মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে, অবৈধ উপায়ে সম্পদ পাচার হচ্ছে। সেই সম্পদ ভোগের সুযোগও তাঁরা পাচ্ছেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। পাচার বন্ধ না করতে পারলে, অর্থাৎ পাচারকারীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে এ অবস্থার আরও অবনতি হবে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে আরও নিচের দিকে যেতে থাকবে, যা বাংলাদেশের লজ্জাই বাড়াবে।

দুর্নীতির বিষয়ে দেশে মাঝেমধ্যে কিছু পদক্ষেপ যে নেওয়া হয় না, তা নয়। মাঝারি থেকে ছোটখাটো কর্মচারীদের বিষয়ে পদক্ষেপ দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেকে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়, আর কিছু ক্ষেত্রে শাস্তি হয়। এই চিত্রটা সন্তোষজনক নয়। বড় দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জনগণের সামনে দৃশ্যমান করতে হবে। প্রচারণা চালিয়ে জানাতে হবে, দুর্নীতিবাজ যত বড়ই হোক, তাকে রাষ্ট্র ছাড় দেয় না। অর্থাৎ দুর্নীতি করলে রেহাই নেই, দুর্নীতিলব্ধ টাকা ভোগের সুযোগ নেই- এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ আছে। 'জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র (এনআইএস)' শীর্ষক এই উদ্যোগটি দাতাদের অর্থায়নে নেওয়া হয়েছিল। তাদের অর্থায়নেই অনেক কাজও হয়েছে। তবে সেসব কাজ আলোচনা সভা ও বৈঠকে সীমাবদ্ধ থাকে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজে এসেছে, কিছু আইন-নীতি প্রণয়ন হয়েছে। তবে এ কৌশলপত্র ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। কৌশলপত্রের ধারণাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লেগে থাকার যে দৃঢ়তা দরকার, সেটা দেখা যাচ্ছে না।
লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

 

 

https://samakal.com/bangladesh/article/2302154305