১৭ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ১০:২৭

কালো টাকার বিস্তার ঠেকাতে জমির মূল্যের সিলিং তুলে দেয়ার উদ্যোগ

আগামী বাজেটের আকার হতে পারে চার লাখ ৭০০ কোটি টাকা

জমির মূল্যের সিলিং তুুলে দিতে চায় সরকার। উদ্দেশ্য কালো টাকার বিস্তার রোধ। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের কিছু এলাকায় জমির মূল্য সিলিং দেয়া রয়েছে। ন্যূনতম এই সিলিং মেনে জমির কেনাবেচা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে জমির প্রকৃত মূল্যের প্রতিফলন থাকে না। বেশি দামে জমি কিনে রেজিস্ট্র্রেশন করার সময় তা কম দাম দেখানো হয়। ফলে এখানে কর ফাঁকি দেয়ার একটি সুযোগ থেকে যায়। এই সুযোগে দেশে কালো টাকার বিস্তার ঘটছে। এই বিস্তার রোধ করার জন্য জমির দামে সিলিং তুলে দিতে চাচ্ছে সরকার। এটি কিভাবে করা হবে তার জন্য আগামী মাসের শেষ দিকে একটি বৈঠকের আয়োজন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে আর্থিক সমন্বয় কমিটি ও বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন। বৈঠক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ উভয় কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয় চার লাখ ৭০০ কোটি টাকা।
বৈঠকে বলা হয়, জমি কেনাবেচায় বর্তমান পদ্ধতিতে কালো টাকার ব্যাপক বিস্তার হচ্ছে। বিশেষ করে জমি রেজিস্ট্র্রেশনের সময় এসব টাকার মালিকেরা জমির সঠিক দাম উল্লেখ করছে না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশি দামে জমি কিনেও কম দাম দেখানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত জমির মূল্যের সিলিংকে দায়ী করা যায়। তাই জমির দামে সিলিং তুলে দেয়ার প্রয়োজন। এতে করে জমির দাম কম দেখানো হলে তা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। ফলে কর ফাঁকি দেয়াও কমে যাবে। তবে এর আগে এই বিষয় নিয়ে আরো আলোচনার জন্য একটি বৈঠক আয়োজনের কথা বলা হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জনশক্তি রফতানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সার্বিক অবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ায় দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নি¤œগামী। আর এ কারণে কর্মীদের বেতনভাতা কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটা কমে গেছে। বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক।
বৈঠকে বলা হয়েছে গত তিন বছরে প্রায় দেড় লাখ কর্মী কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে গেছেন। কিন্তু সে তুলনায় রেমিট্যান্স বাড়েনি। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা নানা কারণে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে হুন্ডি এবং বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত টাকা পাঠানোর সুযোগ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা কমেছে। এ থেকে উত্তরণের করণীয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে আগামী বাজেটের আকার প্রাথমিকভাবে চার লাখ ৭০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। বর্তমান বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে আনা ৩৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ ঘাটতি ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারে বাজেট ঘাটতি আমরা বেশি রাখছি। বাজেট ঘাটতি ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। আগামী বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছর ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
সূত্র জানায়,আগামী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এটি ছিল ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর গত বছর মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। এ সময় বলা হয় আট মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হবে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/212722