৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:২৬

ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে কারাগার থেকে কোর্টে আনা হলো জামায়াত নেতাকে

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে ২০১২ সালের রমনা থানার একটি মামলায় হাজিরা দিতে গতকাল পুরান ঢাকার সিএমএম আদালতে আনা হয়। এ সময় তার হাতে হ্যান্ডকাফ ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান একটি দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক মহানগর আমির। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য। তিনি একজন রাজবন্দী। তিনি সাধারণ কোনো কয়েদি নন। কিন্তু তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ভোর সকালে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে পুরান ঢাকার আদালতে আনা হয়েছে। সেখানে কোর্ট হাজতে সারা দিন থাকার পর আবার সন্ধ্যায় গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ পুরো সময় তার পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছে, যা সংবিধান ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। কোনো অবস্থাতেই তাকে পুলিশ ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে পারে না। মূলত হয়রানির উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে।

অবশেষে সন্ধান মিলল মাওলানা রাফঈর
রাজধানীর বনানী এলাকার অফিস থেকে গত ২৫ জানুয়ারি ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া মাওলানা আব্দুর রাফঈর সন্ধান মিলেছে। হাতিরঝিল থানার একটা মামলায় আটক দেখিয়ে গতকাল তাকে পুরান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের (সিএমএম) হাজতখানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তবে তাকে জামিন শুনানির জন্য আদালতে তোলা হয়নি। তার পরিবার জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। থানায় গেলেও পুলিশ তার সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। এ কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন তারা।

৬ দিন গুম রেখে মাওলানা রাফঈকে নির্যাতন করা হয়েছে-জামায়াত : জামায়াতে ইসলামীর বনানী থানার কর্মী মাওলানা আব্দুর রাফঈকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী থেকে বাসায় ফেরার পথে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাওলানা রাফঈকে আটক করে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে তুলে নিয়ে গোপন স্থানে ছয় দিন নির্মম নির্যাতন করে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। অথচ রাফঈর পরিবার বনানী ও হাতিরঝিল থানায় যোগাযোগ করলেও তার কোনো সন্ধান দেননি বিগত ছয় দিনে।

তিনি আরো বলেন, তার পরিবার নিখোঁজের বিষয়ে বনানী, হাতিরঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। কিংবা তার সন্ধান দিতে সহযোগিতা করা হয়নি। রাষ্ট্রদ্রোহী বা বেআইনি কোনো কাজে কখনো জড়িত না থাকা সত্ত্বেও হাতিরঝিল থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো পরিকল্পিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র ফুটে উঠেছে, যা স্বাধীন দেশের যেকোনো নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরো উসকে দিবে।

বিবৃতিতে সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথকে বেঁচে নিয়েছেন। শুধু মাওলানা রাফঈকে নয়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে পুরো রাজধানীতে বিভিন্ন বাসা-অফিস থেকে অর্ধ সহস্রাধিক জামায়াত কর্মীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের অনেককে ৫-৭ দিন গুম রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত তিন দিনে কাফরুল থানা আমির অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম, পল্লবী পূর্ব থানা আমির আবুল কালাম পাঠান, ভাসানটেক থানা আমির ডা: আহসান হাবিবসহ ১২ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় এবং তড়িঘড়ি করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে আদালতেও তোলা সম্ভব হয়নি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার রাজধানীর মালিবাগে ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলে বাধা ও গ্রেফতার, মহাখালী, মিরপুর-১০ এর মিছিল, বাসা-অফিস থেকে গ্রেফতারসহ জামায়াতের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধাদান ও গ্রেফতার করে অন্যায় করছে। দেশের সুষ্ঠু রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সব দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধাদান, গ্রেফতার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। রাফঈর তিন শিশুসন্তান এবং তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত মুক্তি এবং নির্যাতনে অসুস্থ রাফঈর সুচিকিৎসার দাবি জানান সেলিম উদ্দিন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/724337