৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:২৪

মাত্রাতিরিক্ত বিদেশী ঋণ বেসরকারি খাতে

লাগাম টানতে তদারকি জোরদার

বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ ঋণ ২৯ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি ঋণই বেশি। এসব ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে গেছে। একে তো বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমছে, এরওপর বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতে বেসরকারি খাতে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের লাগাম টেনে ধরতে তদারকি জোরদার করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এখন মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তথ্য তিন মাস অন্তে ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগে এ তথ্য দিতে ব্যাংকগুলো ১ মাস সময় পেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, মূলত বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ তদারকি বাড়ানো ও কী ধরনের পরিশোধের দায় আছে তা তদারকি করতেই মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৪০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বা প্রায় সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সেপ্টেম্বর যা ছিল ১ হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার। ১ বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ৫৭১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসেবে) ৬১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। তবে শঙ্কার বিষয় হলো বেসরকারি খাতে ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে অধিক হারে। বিদেশী ঋণের প্রায় ৭০ ভাগই স্বল্পমেয়াদি ঋণ। এক বছরে এ স্বল্প মেয়াদি ঋণ বেড়ে যাওয়ার হার ৩৮ শতাংশের ওপরে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। এতে প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ এসব ঋণ যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কী না সে বিষয়ে শংসয় রয়েছে। বিভিন্ন সময় মুদ্রাপাচারের অভিযোগ উঠেছে। এক খাতে ঋণ এনে অন্য খাতে ব্যবহার করারও নজির রয়েছে। আবার ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় নতুন ঋণ এনে পুরনো ঋণ পরিশোধ করছেন কেউ কেউ বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ডলার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্যের এলসি খুলতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যংক থেকে প্রায় প্রতিদিনই তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে সরকারি ব্যাংকগুলোর এলসি দায় পরিশোধের জন্য। এ পরিস্থিতি সামলে দায় পরিশোধের চাপ আরো বেড়ে যাবে। এ কারণে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় আরো বেড়ে যাবে। এটা অর্থনীতির জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মন্দা ও ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে তদারকি আরো জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে বেসরকারি খাতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণের সমুদয় তথ্য প্রতি ত্রৈমাসিকের পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। আগে এসব তথ্য প্রতি ত্রৈমাসিকের পর থেকে এক মাসের মধ্যে পাঠানোর নিয়ম ছিল। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এগুলো বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ওই চাপ মোকাবেলার আগাম কৌশল গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, নতুন এ নির্দেশনা চলতি জানুয়ারি মার্চ প্রান্তিক থেকেই কার্যকর হবে।

সার্কুলারে বলা হয়, বেসরকারি খাতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ঋণদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে একটি চুক্তি করেন। এ চুক্তিসহ বৈদেশিক ঋণের সব ধরনের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাঠাতে হবে। আগে এসব তথ্য প্রতি ত্রৈমাসিকের পর থেকে এক মাসের মধ্যে পাঠাতে হতো। এখন পাঠাতে হবে ১৫ দিনের মধ্যে। তথ্য পাঠানোর নিয়ম ১৫ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে।


https://www.dailynayadiganta.com/first-page/724360