২৯ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ৫:৫৬

সব সময় ধুলাময়

ধুলায় আচ্ছন্ন রাজধানীর বসিলা এলাকা। এর মধ্য দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে মানুষজনকে। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
গত শুক্রবারের কথা। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। রাজধানীর গাবতলী থেকে সদরঘাটমুখী বেড়িবাঁধ সড়ক ধরে চলছে পণ্যবোঝাই ট্রাক। সেই ট্রাকের গতির সঙ্গে উড়ছে রাজ্যের সব ধুলা। যেদিকে ট্রাক, সেদিকেই ধুলা। ধুলার অন্ধকার হার মানাচ্ছে রাতকেও।

পরদিন গতকাল শনিবারের কথা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই সড়কেরই রায়েরবাজার এলাকায় দেখা যায় চারপাশে শুধু ধুলা আর ধুলা। এখানে আছে একটি সবজির আড়ত। ধুলায় বদলে গেছে সবজির রং। এই সড়কেই অবস্থিত মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার বাসস্ট্যান্ড। গাবতলী থেকে সদরঘাট যেতে মোহাম্মদপুরের পর রায়েরবাজারের অবস্থান। রায়েরবাজারের দিকে যেতে হলে ধুলার স্তূপের ওপর দিয়ে যেতে হয়। ধুলার আবরণে কোথাও কোথাও পিচঢালা সড়কও ঢেকে গেছে।

শুধু দু-একটি এলাকাই নয়, বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হওয়া গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কটি ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুর, বসিলা, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, কম্পানি ঘাট, শহীদনগর, কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ, সোয়ারী ঘাট ও বাবুবাজারের মতো বড় বড় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে। সড়কের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়েই ধুলার মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

কথা হলে হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের যাদের বাসা বেড়িবাঁধের কাছাকাছি, তাদের জীবন ধুলায় অতিষ্ঠ। রাস্তায় না হয় চোখ-মুখ বন্ধ করে চললাম। ঘরে তো আর চোখ-মুখ বন্ধ করে থাকা সম্ভব না। ধুলায় ঘরের আসবাব, খাবারদাবার, কাগজপত্র সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই সড়কঘেঁষা কামরাঙ্গীর চর এলাকার বুড়িগঙ্গা নদী থেকে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করা হচ্ছে। সব আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে সড়কের পাশে। সেসব আবর্জনা শুকিয়ে ধুলার মাত্রা বাড়াচ্ছে। পুরো সড়কের দুই পাশে ওপরের ভাগে মাটির চেয়ে ধুলার পরিমাণ বেশি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে সড়কের দুই পাশে নিয়মিত উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অবৈধ বাড়িঘর ভাঙলে বাড়ে ধুলা। সড়ক ঘেঁষে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। ইট-বালুর ব্যবসা করছেন অনেকে। সড়কের পাশে ভাঙ্গারি ও গ্রিলের দোকান, জুতাসহ অনেক কিছুর কারখানা। এসব কিছু থেকে ধুলা আরো বাড়ছে। তাই ১২ মাসই ধুলা থাকে এই সড়কে।

লালবাগ এলাকায় থাকেন আমিনুল ইসলাম। তিনি শ্যামলীতে অবস্থিত এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বাসা থেকে বেড়িবাঁধের সড়ক ব্যবহার করে শ্যামলী গেলে অর্ধেক সময় বেঁচে যায় তাঁর। কিন্তু ধুলার কারণে এ পথ দিয়ে যান না তিনি।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন বাসা থেকে আজিমপুর হয়ে শ্যামলী যাই। যেই সময়ে আজিমপুর যাই, প্রায় একই সময়ে বেড়িবাঁধ দিয়ে গেলে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব। কিন্তু ধুলার কারণে বেড়িবাঁধ দিয়ে যেতে মন চায় না। ধুলায় জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। শুধু ধুলা থেকে বাঁচতে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়।’
এদিকে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিশ্বে সর্বাধিক দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ছিল ঢাকা। গতকাল দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ১৮৮। এর আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ২৩৮ স্কোর নিয়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল ঢাকা।

কয়েক দিন ধরে দূষিত অস্বাস্থ্যকর শহরের তালিকার প্রথম সারিতে ঢাকার অবস্থান নিয়মিত। গত সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে ছয় দিনই দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরে এ তালিকা প্রকাশ করে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/01/29/1238636