২৮ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৬:৫৮

চট্টগ্রামে চিনির বাজার অস্থির

আরেক দফা দাম বৃদ্ধি

আরেক দফা দাম বাড়ায় চট্টগ্রামে ফের অস্থির হয়ে উঠেছে চিনির বাজার। চিনির পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও দাম আরও বাড়তে পারে এই আশায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অনেক আড়তদার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। আমদানিকারকরাও অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিশাল অঙ্কের টাকা।

আমদানি করা প্রতিমণ চিনির দাম পড়ছে ২ হাজার ৩শ থেকে ২ হাজার ৪শ টাকা। অথচ আমদানিকারকরা খাতুনগঞ্জে বিক্রি করছেন প্রতিমণ প্রায় চার হাজার টাকা করে। এখন চিনির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টাও চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে পরিশোধন কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে চিনির নতুন দামের বিষয়ে জানিয়েছে। এতে প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম চার টাকা বেড়ে ১১২ টাকা হয়েছে।

অবশ্য বাজারে প্রকৃত দাম এর চেয়ে বেশি। চলতি সপ্তাহেও চট্টগ্রামসহ সারা দেশে খোলাবাজারে প্রতিকেজি চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর আগে গত নভেম্বর মাসে খোলাবাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি ১০২ টাকা, আর প্যাকেট চিনি ১০৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চিনির বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চিনির সংকট এখনো কাটেনি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় বাড়ছে দাম। আবার অনেক আমদানিকারক ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে চাহিদা অনুযায়ী চিনির আমদানি নেই। এ কারণে সংকট সহসাই কাটছে না। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। অতিরিক্ত দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান বাজারে চিনি সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দোকানগুলোতে প্যাকেট চিনি ১১০ থেকে ১১২ টাকা ও খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে আখের লাল চিনি। মোড়কজাত এ ধরনের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিদরে। আমদানিকারক প্রতিমণ চিনি বিক্রি করছে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৯৫০ টাকা দরে। প্রতিকেজি চিনি আমদানিকারকরা বিক্রি করছেন ১০৬ টাকার বেশি দরে। তারা প্রতিকেজি চিনিতে মুনাফা করছেন ৬ টাকা। এই চিনি খুচরা বাজারে মুদি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা কেজি দরে।

চাক্তাই-খাতুনগেঞ্জর ব্যবসায়ী কামরুল হাসান মহিব জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আমদানি ব্যয়ের চেয়ে অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি করছেন আমদানিকারকরা। আমদানি করা প্রতিমণ চিনির দাম পড়ছে ২ হাজার ৩শ থেকে ২ হাজার ৪শ টাকা পর্যন্ত। অথচ আমদানিকারকরা খাতুনগঞ্জে বিক্রি করছেন প্রতিমণ চার হাজার টাকা করছেন। এরা (আমদানিকারকরা) অতি মুনাফা করছেন। এদের অনেকে আবার চিনির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থির করছেন। যাতে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেওয়া যায়।

এদিকে বাজারে নতুন চাল আসায় পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে চালের দাম। প্রতিবস্তা চালে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব নেই। খুচরা বাজারে আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। এদিকে চিনির পাশাপাশি বেড়েছে আদা ও রসুনের দামও। আমদানির মাধ্যমে দেশে আদা-রসুনের চাহিদা মেটানো হয়। বাজারটি মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন চীন থেকে পণ্য আমদানিকারকরা। সম্প্রতি বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মতো আদা-রসুনের বাজারেও সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় চাহিদার শীর্ষে থাকা এ দুটি মসলার দাম অতিমাত্রায় বেড়েছে।

নগরীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা আদা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। কেরালা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/639240