২৮ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৬:৩২

ঢাবি ক্যাম্পাসে শব্দদূষণ

-ইবনে নূরুল হুদা

আমাদের দেশ শব্দ দূষণের জনপদ হিসাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছে। শুধু তাই নয় বিশ্বের সর্বোচ্চ শব্দদূষণের নগরী হিসাবে রাজধানী ঢাকার নামও ওঠে এসেছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমনটিই জানানো হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, শব্দদূষণের ফলে শ্রবণ শক্তি হ্রাসের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচার-আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শব্দের কারণে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক স্বাভাবিক কার্যকলাপ ও বিকাশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানাবিধ ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্মরণশক্তি হ্রাস ও মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হতে পারে। যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য বড় ধরনের অন্তরায়।

ঢাকাকে রূপসী ও তিলোত্তমা নগরী দাবি করা হলেও মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে নগরজীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। হুমকির মুখে পড়েছে নগরজীবন ও জনস্বাস্থ্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে কোমলমতি শিশুরা-কিশোররা। বিশেষ করে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই নেতিবাচক প্রভাবটা এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এমনকি শব্দদূষণের এইসব মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার পরিবেশ এখন বিপন্ন হতে চলেছে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠ মারাত্মক শব্দদূষণে এখন অনেকটাই বিপর্যস্ত।

বিভিন্ন সময়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে উচ্চস্বরে মাইক, সাউন্ড বক্স বাজানো, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তর দিয়ে অবাধ যান চলাচল, ভাসমান দোকানপাট কেন্দ্রীক গণমানুষের ভীড় সহ নানাবিধ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস এখন শব্দদূষণে অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য এবং পড়াশোনার পরিবেশের উপর। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব নিয়ন্ত্রণে তৎপর দেখা গেলেও তা দায়সারা গোছের হওয়ায় কার্যত এর তেমন কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায় না। ফলে মানবসৃষ্ট এ দুর্ভোগের জন্য নাগরিক সমাজের অসচেতনতাকেও দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এক্ষেত্রে অনেকটাই আলাদা ও পুরোপুরি শিক্ষাবান্ধব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি পরিবেশ ও শিক্ষাবান্ধব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটাই শিক্ষা ও গবেষণার অনুকূল। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নির্জন পরিবেশ বিরাজমান। বাইক, রিক্সা কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি আর মাইকের অসহনীয় শব্দ থেকে অনেকটাই মুক্ত এসব ক্যাম্পাস। ফলে এখানে ক্লাস ও পরীক্ষায় মনোযোগ দেয়া যায় এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাজ গবেষণায় অধিক মনোযোগ দেয়াও সম্ভব হয়। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শব্দদূষণের কারণে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা খুবই উদাসীন। ফলে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঢাকা নগরীতে সর্বোচ্চ শব্দদূষণ এলাকা হচ্ছে শাহবাগ। এই এলাকায় অবস্থিত দেশের ঐতিহ্যবাহী এক কালের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে আসলে মনে হবে না যে এটা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এসময় অনেকটা বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সপ্তাহের অন্যান্য দিনও বিকেল থেকে বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়তে থাকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই অপ্রয়োজনে ক্যাম্পাসে না আসার আহ্বান করা হলেও তা মেনে চলার গরজ কেউ দেখায় না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ব্যক্তিগত কার, মোটরসাইকেল, রিক্সা ও ভারী যানবাহনের অবাধ প্রবেশাধিকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উচ্চ আওয়াজে মাইকের ব্যবহার এবং ভাসমান দোকানপাট কেন্দ্রীক গণমানুষের ভীড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও গবেষণার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তবে কেবল সমস্যা চিহ্নিত করণ নয়, এর সমাধানের বিভিন্ন পরামর্শও দিয়েছে পরিবেশবিদরা। যা খুবই যুক্তিসংগত ও বাস্তবসম্মত।

জানা গেছে, ক্যাপসের সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে শব্দদূষণ রোধে কিছু নীতিমালার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৮-এ এর সংজ্ঞা অনুযায়ী চিহ্নিত জোনসমূহে (নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনপোস্ট উপস্থাপন করে জনসাধারণকে সচেতন করা, প্রয়োজন ছাড়া হর্ন বাজানোর থেকে বিরত থাকা, সন্ধ্যার পর উচ্চস্বরে গান না বাজানো এবং সন্ধ্যার পর নির্মাণ কাজ না করা, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, শব্দদূষণের পূর্বাভাস দেয়ার প্রচলন এবং পরিবেশ বিষয়ক বিসিএস ক্যাডার প্রণয়ন ও নিয়োগ, জনস্বাস্থ্য ও স্বার্থ রক্ষায় সরকার ও সচেতন মহলের সমন্বিত অংশীদারিত্বমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক, টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই সংবাদ সম্মেলনে। যা আত্মসচেতন মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গৌরব ও ঐহিত্যের স্মারক হলেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গত দশ বছরেও তেমন উন্নতি করতে পারেনি। বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে ঢাবির অবস্থান দিনদিন হতাশাজনক হচ্ছে। এসব নিয়ে মাথাব্যথাও নেই ঢাবি কর্তৃপক্ষের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সংবাদ মাধ্যমে প্রায় বলেন, যেসব সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণ করা হয়, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সেসকল সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং বাড়ছে না। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের।

শব্দদূষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নেও যথেষ্ট বেগ পেতে হবে বলে মন্তব্য মনে করেন বিদেশী বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দেশীয় শিক্ষার্থীরা। তারা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনাই হয় না। বিদেশী বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি ঢোকার সুযোগ নেই। সরকারি কিছু বাস ক্যাম্পাসের বাইরে চলাচল করে। সেখানে নেই কোন ছাত্র রাজনীতি। নেই কোন অস্থিরতা, সংঘাত, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সবগুলো কর্মসূচি হয় অডিটোরিয়াম কেন্দ্রীক। উন্মুক্ত জায়গায় কোনো ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হয় না। অথচ ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে অনেক বেশি উন্মুক্ত জায়গা রয়েছে। এখানে সবুজ গাছগাছালি, মনোরম পরিবেশে বসার জন্য সিট রয়েছে, ছাত্র-শিক্ষকদের আড্ডা দেয়ার জন্য রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া।

মূলত, বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটা ধর্মীয় উপাসনালয়ের মতো যেখানে মানুষ জ্ঞান চর্চা করে এবং সুপ্তপ্রতিভার বিকাশ ঘটায়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকরা থাকবে আর বাকিরা হলো এদের সহায়ক। এদের বাইরে কারো অযথা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনাগোনা উচিত নয়। ক্যাম্পাসটা হতে হবে নিরিবিলি ও শিক্ষাবান্ধব। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানে মাইক যাচ্ছে, ট্রাক যাচ্ছে; মেট্রোরেল যাওয়ারও আয়োজন চলছে। এসব কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র হতে পারে না। মূলত, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত একটা পার্কের মতো। শিক্ষক ক্লাস নিয়ে ক্লান্ত হবেন, একটা বেঞ্চ থাকবে, পাখির আওয়াজ থাকবে, তিনি মনোমুগ্ধকর পরিবেশে তা দেখবেন, চিন্তা করবেন; ফলে নতুন নতুন আইডিয়া ও অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি হবে, গবেষণার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে, ক্যাফেটেরিয়াতে যাবেন, ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা করবেন, নতুন কিছু শিখবেন-এগুলোই হলো একটা বিশ্ববিদ্যালয়।

বস্তুত, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। শতভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী হয়েও যদি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টাকে সুন্দর করতে না পারা যায়, তাহলে পুরো দেশকে কীভাবে সুন্দর করা সম্ভব হবে? এর কোন সদুত্তর নেই। আমরা উদাহরণ হতে পারিনি বলেই আজকে ক্যাম্পাসে বহিরাগতের আনাগোনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা যখন দেখছে যে, আমাদের মাঝে আর তাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, তখনই তারা নির্দ্বিধায় ক্যাম্পাসে আসছে এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করছে। তারা তো নিউমার্কেট আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন আর আলাদাভাবে দেখতে পারছে না! আজকে যদি আমরা শিক্ষিত হতে পারতাম, আমরা যদি উদাহরণ হতে পারতাম, তাহলে তো তারা ক্যাম্পাসে এসে একটা ময়লা ফেলোনোর আগেও দশবার ভাবতো যে এটা তো শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জায়গা! এখানে তো এমনটা করা যায় না!

মূলত, নানাবিধ কারণে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শব্দদূষণ এখন সকল সময়ের সীমা অতিক্রম করেছে। এ সমস্যার সমাধানকল্পে নানাবিধ পরামর্শ এসেছে পরিবেশবিদদের পক্ষ থেকে। তারা বলছেন, সমস্যা সমাধানের জন্য করণীয় নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে হবে। আগে বুঝতে হবে আমরা সমাধান চাই, শিক্ষার মান বাড়াতে চাই; তাহলে আমাদের ইউনেস্কোর প্রেসক্রিপশন মানতে হবে। জিডিপির মিনিমাম ২.৫ শতাংশ শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে।

পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করা দরকার। ঢাকার মধ্যে এরকম খোলা জায়গা, সবুজ পরিবেশ খুব সীমিত বিধায় জনসাধারণ এখানে এসে ভিড় করে। এটা তো দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে। রাজনৈতিক মিছিল, মিটিং, সমাবেশ এখানে হচ্ছে। এখানে এসে মানুষ নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এবং সেটা গিয়ে নিজেদের জীবনে তারা এপ্লাই করছে। এটা তো একটা ইতিবাচক দিক। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক বেশি শিথিলতা দেখাচ্ছে, ঠিক তখনই বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই প্রশাসনকে একটা মানদ- দাঁড় করাতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে গ্রহণ করতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।

বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু আইন প্রয়োগ করবে আর সিভিল সোসাইটি নিজেদের মতো চলবে-তাহলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা তো মানবিক কারণে সবার সাথে কঠোর হতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভাসমান দোকান রয়েছে যেগুলো আমরা উঠিয়ে দেয়ার পর আবার তারা বসে। কারণ তাদের রুজিরোজগারের তো এই একটাই উপায় রয়েছে’।

তারা আরো জানাচ্ছেন, অনেক ছাত্র সংগঠন তাদের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে আমাদের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন মনে করে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হলেও ইতিবাচক একটা পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় ছিল যখন এসব ছাত্র সংগঠন ক্লাস চলাকালীন সময়ে বারান্দায় পর্যন্ত স্লোগান মিছিল করতো। কিন্তু এখন সেটা আর দেখা যায় না। তারা উন্মুক্ত জায়গায় এখন কর্মসূচি করে থাকে।

মূলত, নানাবিধ কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন শব্দদূষণের কবলে পড়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানাবিধ মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এজন্য অনেকটা দায়ী হলেও এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও নেহাত কম নয়। মূলত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একেবারে রাজধানীর প্রাণক্ষেত্রে। এমতাবস্থায় বিবেকবান, সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাসহ সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে যদি ইতিবাচক চিন্তা ও সম্মিলিতভাবে যুৎসই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তবে সার্বিক পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যায়ল প্রশাসনের দায়টা সবার চেয়ে বেশি। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে এ বিষয়ে কার্যকর ও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুকূল ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

https://dailysangram.com/post/514911