২৭ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ৬:২১

এক বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ছয় বছরেও

৫০ কোটি টাকার সুফল মিলছে না, দুর্ভোগ লক্ষাধিক মানুষের

খুলনার দাকোপ উপজেলার ভদ্রা নদীর ওপর সেতুর সংযোগ সড়কের রিটেইনিং ওয়াল ধসে পড়ার পর আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ সমকাল
খুলনার দাকোপ উপজেলার কালীনগর এলাকায় ভদ্রা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল পরের বছর ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। তবে গত ছয় বছরেও সেতুটি চালু করা যায়নি। এর মধ্যে ঠিকাদারও পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন সেতুর কাজ প্রায় শেষ হলেও সংযোগ সড়কের সুরক্ষা দেয়াল ধসে পড়ার পর আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের কোনো সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় লক্ষাধিক মানুষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে জানা গেছে, উপজেলার কালীনগর-খুটাখালী এলাকায় ৪৪২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার পিটিএসএল-মৈত্রী প্রাইভেট লিমিটেড। তখন ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় সেতুটি ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্মাণ করার কথা ছিল। তবে সময় বাড়ানোর পরও কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় ওই বছরের ১৪ আগস্ট কার্যাদেশ বাতিল করে এলজিইডি। এ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিট করলে দুই দফায় ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেন আদালত।

এর পরও কাজ শেষ না করতে পারায় প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত এবং জরিমানা করে এলইজিইডি। অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ২০২০ সালের মে মাসে এলজিইডি বরিশালের মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি করে। ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাকি কাজ ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর শেষ করার কথা ছিল। ২০২০ সালের জুলাইয়ে মূল সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়। তবে বালু ভরাটের সময় সেতুর সংযোগ সড়কের দুই পাশের সুরক্ষা দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল) ধসে পড়ার পর কাজ ফেলে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর পর সেভাবেই পড়ে আছে আড়াই বছর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, নকশার ভুলে সুরক্ষা দেয়াল ধসে পড়ে। কারণ ভূমি থেকে সাধারণত এত উঁচুতে রিটেইনিং ওয়াল তৈরি করা যায় না। সেতুর জন্য জমি কম অধিগ্রহণ করায় সংযোগ সড়কটি কিছুটা আড়াআড়ি হয়েছে- এসব কারণে ওই সমস্যা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, রিটেইনিং ওয়ালটি মজবুত করা প্রয়োজন ছিল। মাটির গভীর থেকে ওয়াল তোলা হয়নি। রডের পুরুত্ব ও ঘনত্বও ঠিক ছিল না। দায়সারাভাবে নির্মাণ করায় বালু ভরাট করার পর তা ভেঙে যায়।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কালীনগর গ্রামের বাসিন্দা নাহিদ সরদার, প্রমথ শীল ও অমৃত রায় জানান, আগে নৌকায় একজনের ভাড়া ছিল ৫ টাকা, এখন নেয় ১০ টাকা। অথচ সেতুটি চালু হলে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হতো দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান বলেন, তিনি একাধিকবার প্রকল্প পরিচালক ও এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছেন। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।

খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিছুজ্জামান সমকালকে বলেন, যে প্রকল্পের অধীনে সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় বাকি কাজ শেষ করার জন্য ব্যয় প্রাক্কলন তৈরি করা হচ্ছে। এর পর তা অনুমোদনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিযুক্ত করে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। তবে কাজ শেষ করে সেতুটি কবে নাগাদ চলাচলের উপযোগী করা যাবে, তা তিনি বলতে পারেননি।

https://www.samakal.com/whole-country/article/2301153508