২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৭:০৫

ভোগ্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা করপোরেটদের কারণে

করপোরেট কম্পানিগুলো যত দিন ভোগ্য পণ্যের ব্যবসায় নামেনি তত দিন পর্যন্ত পণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যেই ছিল। তারা ভোগ্য পণ্য বাজারজাতকরণের পর থেকেই পণ্যের দাম ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন কোনো কম্পানি এককভাবে বাজারের ২০ শতাংশের বেশি যেন দখল করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। তবেই নিত্যপণ্য ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের (আদা, রসুন, হলুদ ও শুকনা মরিচ) সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আমদানিকারক, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় এসব কথা উঠে আসে।

সভায় কারওয়ান বাজারের কৃষি মার্কেটের নোয়াখালী জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, করপোরেট কম্পানিগুলো যখন থেকে বাজারে এসেছে তখন থেকেই পণ্যের দাম বাড়ছে। এক বছর আগে এক বস্তা ময়দার দাম ছিল এক হাজার ১৬৫ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০০ টাকা। তারা মুখে মুখে বলে সংকট, কিন্তু বাস্তবে কোনো সংকট নেই। তারা মজুদ করে রাখছে। এসব কম্পানি বাজারে আসার পর ৪০ টাকার জিনিস এখন ১৪০ টাকা হয়ে গেছে।
শফিকুর নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এখন করপোরেট কম্পানিগুলো বলছে ডলার সংকটের কারণে তারা এলসি খুলে আমদানি করতে পারছে না, এসব ছলনা। ডলার সংকটের কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে তাই বলে তো আর দেশে তৈরি পণ্যের দাম বাড়তে পারে না। দেশের কৃষকদের উত্পাদন করা ৯৮ টাকা কেজি পোলাওয়ের চাল এখন ১৫০ টাকা হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, তারা মজুদ করে পরে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দেখবেন যখন পণ্যের দাম কমে যায় তখন এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০০ গ্রাম পণ্যও থাকে না। কিন্তু যখন দাম বাড়ে তখন মুহূর্তেই বাজারে পণ্য চলে আসে। বর্তমানে ফ্রেস কম্পানি থেকে ১০৭ টাকার চিনি ১০৯ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

আসন্ন রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়।

সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে আসন্ন রমজানে যেন পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো না হয় সে বিষয়েও ব্যবসায়ীদের তাগিদ দেন তিনি। মহাপরিচালক বলেন, যেসব সাজেশন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এসেছে, তা সুপারিশসহ একটি লিখিত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, ‘রমজানের আগে আমাদের দেশি পেঁয়াজ উঠবে। এতে করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই। ৫০ টাকার মধ্যেই থাকবে দাম। কিন্তু আদা-রসুনের বাজার অস্থির। রমজান আসার আগেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বাড়ছে। কিছু পণ্য হয়তো আমদানিনির্ভর, ডলারের দাম বৃদ্ধি অনুসারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারত। কিন্তু ডলারের বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম আরো বেশি বাড়ানো হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাজার আরো অস্থির হয়ে যাবে।

এ সময় এফবিসিসিআই সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করলে তাঁদের আইনের আওতায় শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তিনি ব্যবসায়ীদের সঠিক মূল্যে ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রির অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, রমজানে যেসব পণ্য লাগবে তা এরই মধ্যে দেশে চলে এসেছে। রমজানের পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে। কারণ কোনো পণ্য আনতে গেলে চার মাস আগে এলসি খুলতে হয়। এখন ব্যবসায়ীরা রমজানের পণ্য আনবে বলে সরকারের কাছ থেকে যেসব সুবিধা চাচ্ছেন সেগুলোর কোনো দরকার নেই।

সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি, এনএসআইয়ের প্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

https://www.kalerkantho.com/online/business/2023/01/24/1235208