২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৩৫

ডিএনসিসির উদাসীনতায় ঢাকায় দূষণ বাড়ছে

সিটি করপোরেশন ডিএনসিসির উদাসীনতায় ঢাকায় দূষণ বাড়ছে। ফলে বারবার দূষিত শহরের তালিকায় বিশে^র শীর্ষে উঠে আসছে রাজধানী ঢাকা। গত কয়েক মাস থেকেই এমন পরিস্থিতি যাচ্ছে। একদিন দূষণ একটু কমে তো পরদিন আবার শীর্ষে যাচ্ছে। এভাবে করে দিন দিন ভয়াবহ দূষণে বসতির অযোগ্য হয়ে পড়ছে ঢাকা।
এমন অবস্থার জন্য সিটি করপোরেশন প্রধানত দায়ী মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু নগরের অভিভাবক সিটি করপোরেশন, তাই তাদের উচিত প্রতিটি কাজে সমন্বয় করে তার নিয়ন্ত্রণ করা। নয়তো একসময় নগরে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়বে। গতকালও বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বাতাসের শহরের তালিকায় আবারো শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ৩১৫ নিয়ে সকাল ৮টায় ঢাকার বাতাসের মান ‘বিপজ্জনক’ অবস্থায় ছিল। ভারতের দিল্লি ও চীনের শেনইয়াং যথাক্রমে ৩১৩ ও ২৪৫ স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান দখল করেছে।

এর আগে রোববারও বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বাতাসের শহরের তালিকায় আবারো শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা। শুক্রবার সকাল ৮টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ৩১৫ নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘বিপজ্জনক’ অবস্থায় ছিল।

অন্যদিকে শনিবারও ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে। সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২৪৯ নিয়ে বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। আর শুক্রবার বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা আবারো শীর্ষে উঠে। সকাল ৮টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ৩১৭ নিয়ে রাজধানীর বাতাসের মান ছিল ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকার বাতাসের মানও ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৯৪ নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় রাজধানীর অবস্থান পঞ্চম। এভাবে করে সপ্তাহের বেশি দিনই দূষণের শীর্ষে আসছে ঢাকার নাম। কিন্তু এর পরও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন উদাসীন রয়েছে। নামমাত্র কাজ করে দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে লাভ হয়নি। ফলে মারাত্মক দূষণে রাজধানীতে প্রতিদিনই আলোচনায় আসে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি।

বিরজমান পরিস্থিতিতে পরিবেশবিদ ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, যেহেতু সিটি করপোরেশন নগরের অভিভাবক তাই শহরের ভালোমন্দে তাদের দায় বেশি। যেসব উৎস থেকে নগরী দূষিত হচ্ছে তার মধ্যে পরিবহনের বিষয়টি বাদ দিলে দূষণের উৎসের অন্যসব কিছুর দায় সিটি করপোরেশেনের। কারণ শহরের উন্নয়ন, ভবন নির্মাণ সবই সিটি করপোরেশনের অনুমতিক্রমে হয়। কিন্তু এর মধ্যে নিয়ম মেনে সব পরিচালনা হয় না। ফলে দূষণের উৎস সৃষ্টি করে এমন কাজগুলোতে সমন্বয় ও নজরদারীর দায়িত্ব ডিএনসিসির। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা উদাসীন বলেই কাজে নিয়ম মানা হয় না। যার প্রভাব জনস্বাস্থ্যে পড়ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের বাধ্যবাধকতা আছে। আপনি মেয়রের সাথে কথা বলতে পারেন’। এদিকে দূষণের বিষয়টি আলোচনায় আসায় দেরিতে হলেও কিছুটা তৎপর হয়েছে সিটি করপোরেশন। বায়ুদূষণ কমাতে অত্যাধুনিক মেশিনে পানি ছিটানো শুরু করেছে। দূষণ কমাতে ধুলোবালি নিবারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) অত্যাধুনিক স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে পানি ছিটাচ্ছে। দুটি স্প্রে ক্যানন ডিএনসিসি এলাকার মহাসড়কে পানি ছিটানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

জানা যায়, ডিএনসিসির আওতাধীন পুরো এলাকার মহাসড়ককে দুটি ভাগে ভাগ করে একদিন অন্তর অন্তর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এমন দুটি মেশিন দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। এসব গাড়ীর প্রতিটিতে ১৫ হাজার লিটার পানি ধরে এবং একটানা ৫ ঘণ্টাব্যাপী স্প্রে করতে পারে। এ ছাড়া রাস্তা ভেজানোর জন্যও রয়েছে স্প্রিং লেয়ার সিস্টেম। বনানী নেভি গেইট থেকে গতকাল সকালে স্প্রের কাজ শুরু করে ক্যানন-১। এয়ারপোর্ট, উত্তরা হাউস বিল্ডিং হয়ে আবার বনানী কবরস্থান এলাকায় এসে কাজ শেষ করে।

অন্যদিকে ক্যানন-২ মিরপুর রোড/মাজার রোড সিগন্যাল থেকে স্প্রের কাজ শুরু করে। এরপর গণভবন এলাকায়, মানিক মিয়া এভিনিউ, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ফার্মগেট, কারওরানবাজার, মগবাজার হয়ে গাবতলী গিয়ে পানি ছিটানো শেষ করে। মহাসড়ক ছাড়াও ডিএনসিসি এলাকার অন্যান্য সড়কে ১০টি ওয়াটার ব্রাউজার (পানি ছিটানোর মেশিন) দিয়ে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুইবার পানি ছিটানো হয়। শীতকালে ধুলাবালির পরিমাণ বেশি থাকায় পানি ছিটানোর কাজ চলমান থাকবে বলে ডিএনসিসি জানিয়েছে ।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/722681