২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৩২

পাঠ্যবইয়ের ভুল তথ্যে আস্থা হারাবে শিক্ষার্থী

কী শিখছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের কাছে যেকোনো তথ্য বা তত্ত্বের জন্য পাঠ্যবই সবচেয়ে বড় দালিলিক প্রমাণ। কেননা পাঠ্যবই থেকে একজন শিক্ষার্থী যেসব বিষয় জেনে বুঝে বড় হয় সেটাই সারাজীবন সে কাজে লাগায়। কিন্তু পাঠ্যবইয়ের ভুলের কারণে একজন শিক্ষার্থীকে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শিক্ষাজীবনের যেকোনো প্রতিযোগিতায় তাকে পিছিয়ে পড়তে হয়। ফলে পাঠ্যবইয়ের প্রতি এভাবেই আস্থা কমে যায়। শিক্ষার্থীর মনে তৈরি হয় নেতিবাচক ধারণা। বিরূপ ধারণা হয় শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর।

চলতি ২০২৩ সালের নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী যেভাবে পাঠ্যসূচি সাজানো হয়েছে সেখানে অনেক বিষয়ই পাঠ্যবইয়ে নতুনভাবে স্থান পেয়েছে। পুরনো পাঠ্যক্রম বাতিল করে নতুন বিষয় ও পাঠ্যসূচি সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই এসব নতুন বইয়ে যেভাবে ভুল তথ্য ও তত্ত্ব নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে তাতে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেই নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ দিকে যদিও পুরনো সিলেবাসের আলোকেই রচিত নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের ভুল স্বীকার করে গত সপ্তাহে সংশোধনী দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নবম-দশম শ্রেণীর তিনটি পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার লিখিত আকারে এই সংশোধনী প্রকাশ করেছে এনসিটিবি। সূত্র মতে, যে তিনটি পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধন করা হয়েছে সেগুলো হলো, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা।

এনসিটিবির দেয়া সংশোধনীতে বলা হয়, নবম ও দশম শ্রেণীর ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের চারটি ভুল সংশোধন করা হয়েছে। বইটির ১৮১ পৃষ্ঠায় বলা ছিল, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে। একই বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় আছে, ‘১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহম্মদ সায়েমের কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।’ এ অংশটি সংশোধন করে বলা হয়েছে, ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ওই বইয়ের ২০৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ লাইনে ‘পঞ্চম ভাগে আইনসভা’।

অন্য দিকে নবম-দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইতে তিনটি সংশোধনী দেয়া হয়েছে। এ বইয়ের ছয় পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল চারটি হলো- আওয়ামী লীগ, কৃষকশ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল। এ অংশের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের পাঁচটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল পাঁচটি হলো- আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফতে রব্বানী পার্টি। একই বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠায় বলা আছে, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প। ওই অংশের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ও পিলখানা ইপিআর সদর দফতর।

পাঠ্যবইয়ে এমন ভুল ও পরে তা সংশোধনী দেয়ার পরেও স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবকদের মনে পাঠ্যবইয়ের বিষয়ে নানা বেদনা, ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কয়েক দফায় চেক-রিচেক করার পরেই পাঠ্যবই লাখ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে গিয়ে পৌঁছায়। তাহলে সেখানে ভুল থাকে কিভাবে? তাহলে কি শিক্ষার্থীরা ভুল জেনেই বড় হবে? পাঠ্যবইয়ে ভুল প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তারিক মনজুর গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, পাঠ্যবই শিক্ষার্থীরা প্রামাণ্য হিসেবে বিবেচনা করে। কাজেই এখানে কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে স্বভাবতই আস্থা হারাবে শিক্ষার্থীরা। তাই পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অবশ্যই আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি আরো বলেন, নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবইগুলো পরীক্ষামূলক সংস্করণ বলে দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যদিও বলা হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে ভুলের সংখ্যা সীমাহীন নয়। তবে এ বছর নতুন কারিকুলাম অনুসারে লিখিত নতুন পাঠ্যবইয়ে যে ধরনের ভুল ধরা পড়ছে তা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। একই সাথে বইয়ের মধ্যে তথ্যগত অসঙ্গতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি হয়। এই দ্বিধা ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে আস্থার সঙ্কটও সৃষ্টি করবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/722649