২১ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৫:৪৩

ডিমসহ কাঁচাবাজারে আবারো অস্থিরতা

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির একদিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর ডিমের বাজারে আবারো অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে এর প্রভাব পড়েছে। ২ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দাম ৩০-৩৫ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে মানের ওপর নির্ভর করে এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। কিছু কিছু জায়গায় প্রতি ডজন ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৮০ টাকায় এবং দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। অথচ চলতি মাসের শুরুতে ফার্মের ডিম প্রতি ডজন ১০৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম হালিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া সুপার শপে একই ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। অন্যদিকে ভরা শীতের মৌসুম হলেও বিশ্ব ইজতেমার অজুহাতে রাজধানীর বাজারে সবজিতে মিলছে না স্বস্তি। প্রচুর পরিমাণে সবজি ইজতেমা ময়দানের দিকে চলে গিয়েছিল।

যে কারণে ঢাকায় সবজি কম এসেছে। সরবরাহ ভালো থাকার পরও এক সপ্তাহের ব্যবধানে শাক-সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। বাজারের জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সব ধরনের ডিমের দাম বৃদ্ধির সত্যতা পেয়েছে। টিসিবি’র বাজার মনিটরিং সেলের তথ্যমতে, চলতি মাসের শুরুর তুলনায় জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত প্রতি হালি ডিমের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফার্মের মুরগির হালি বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়। হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে।

কাওরান বাজারে ডিম কিনতে আসা খালেক উদ্দিন বলেন, গত ৫ই জানুয়ারি দুই ডজন ডিম কিনেছি ১১০ টাকা করে ২২০ টাকায়। এখন কিনতে এসেছি, দোকানদার বলছে, ১৪০ টাকা ডজন। মাত্র ১২ থেকে ১৪ দিনে ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা বেড়েছে। ডিম ব্যবসায়ী আলম মিয়া বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডিমের ডজন বিক্রি করেছি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। সেই ডিম এখন বিক্রি করছি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। সাইজে একটু বড় ডিমের ডজন বিক্রি করছি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
পাইকারি কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম মণ্ডল বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় ডিমের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। মুরগির খাবারের দাম বাড়ার পর যাতায়াত ভাড়াও বেড়েছে। খামারিদের থেকে কম দামে আনতে পারলে ভোক্তাদেরও কম দামে ডিম দিতে পারবো।

ডিম উৎপাদনকারীরা বলেন, শীতকালে ডিমের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন কমে। মহামারির কারণে অনেক খামারি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এ ছাড়া খাদ্য ও উৎপাদনের খরচ দেড় বছরে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কম দামে ডিম বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে।

এদিকে বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিমের কেজি ১০ টাকা বেড়ে মান অনুযায়ী ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গেল সপ্তাহে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০০ টাকা। আজ তা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ১২০ টাকা, ১০ টাকা বেড়ে গোল ও লম্বা বেগুন কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়ে বরবটি প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১২০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ১২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মাঝারি আকারের লাউ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গেল সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি গেল সপ্তাহে ২০ টাকা ছিল তা এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে রুই মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, দুই কেজি ওজনের নদীর পাঙাশ ৬০০ টাকা, ছোট বোয়াল প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ছোট কাতল প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, ছোট পাঙ্গাশ কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, শোল মাছ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ টাকা, ছোট চিংড়ি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে ৯০০-৯৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, ৭০০ গ্রামের ইলিশ ৮৫০ টাকা, ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৭৫০ টাকা, সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে। প্রতি কেজি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি মুরগি ২৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা ও গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সরু চালের দাম। বাজারে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়তি দামে। আমন মৌসুমেও বাজারে চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। শুধু মোটা চালের দাম সামান্য কমেছিল। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে সরু চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। টিসিবি’র তথ্যমতে, বাজারে মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বুধবার বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া চিকন বা মিনিকেট চালের কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালোমানের নাজিরশাইলের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপরও বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।


https://mzamin.com/news.php?news=39326