১৯ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৭

রমজান ঘিরে মজুদ কম

আসন্ন রমজান ঘিরে সরকার নানা ধরনের প্রস্তুতি নিলেও ঋণপত্র খোলার জটিলতা, বিশ্ববাজারে দাম বেশি থাকায় পণ্য কম আমদানির কারণে চলতি বছর টিসিবির মজুদ কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারের এই সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, আমদানি কিছুটা কমলেও ঘাটতি সামাল দেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

টিসিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, সারা দেশের পুরো চাহিদার আলোকে টিসিবি পণ্য মজুদ করে না, শুধু গৃহস্থালির বা পারিবারিক প্রয়োজনের আলোকেই টিসিবি পণ্য মজুদ করে। সে অনুসারে রোজায় টিসিবি গৃহস্থালি চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্য মজুদ করে।

আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ৪ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স’-এর সভা হয়। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ ওই সভায় পাঁচ পণ্যের রোজায় চাহিদা ও মজুদ নিয়ে তথ্য দেন। তিনি জানান, রমজানে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাড়তি চাহিদার তুলনায়, বিশেষ করে চিনির ঋণপত্র (এলসি) তুলনামূলক কম খোলা হয়েছে। তাই রমজানে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে অত্যাবশকীয় পণ্যের আমদানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া পেঁয়াজ ও মসুর ডালের স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং উৎপাদনের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করার বিষয়ে সতর্ক উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুসারে, ২০২১ থেকে ২০২২ সাল (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়ে চার পণ্যের আমদানি কম হয়েছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত চিনির আমদানি কম হয়েছে দুই লাখ সাত হাজার ৯৪৫ টন। পাম তেলের (ক্রুড) আমদানি কম হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৯৩৮ টন। ছোলা আমদানি কম হয়েছে ১৪ হাজার ১৬৪ টন এবং খেজুর আমদানি কম হয়েছে ৩৮৯ টন।

কমিশনের তথ্য অনুসারে, রমজানে ভোজ্য তেলের চাহিদা তিন লাখ টন। আর বছরে মোট চাহিদা ২০ লাখ টন। দুই লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। তবে প্রক্রিয়াকরণের সময় ক্ষতি হওয়ার কারণে ২০ লাখ টনই আমদানি করতে হয়। মাসিক চাহিদা এক লাখ ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টন।

রমজানে দেশে পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে তিন লাখ টন। বছরে ২০ লাখ টন। আমদানি হয় বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টন। পরিশোধনকালে সাড়ে ৬ শতাংশ ক্ষতি হয়। আর দেশে মাসিক চাহিদা দেড় লাখ টন। দেশে রমজানে মসুর ডালের চাহিদা প্রায় এক লাখ টন। বার্ষিক চাহিদা ছয় লাখ টন। বার্ষিক আমদানি হয় চার লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় দুই লাখ ২০ হাজার টন। পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় চার লাখ টন। বছরে চাহিদা ২৫ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন ২৭ লাখ ৩০ হাজার টন। প্রতি মাসে লাগে দুই লাখ টন। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতের সময় ক্ষতি হয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া সংরক্ষণপ্রক্রিয়ায় ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ।
রমজানে ছোলার চাহিদা এক লাখ টন। আর বার্ষিক চাহিদা এক লাখ ৫০ হাজার টন। আমদানি হয় প্রায় দুই লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় চার হাজার ৬০০ টন। মাসিক চাহিদা পাঁচ হাজার টন। রমজানে খেজুরের চাহিদা ৫০ হাজার টন। বছরে চাহিদা এক লাখ টন। আর মাসিক চাহিদা পাঁচ হাজার টন।

টিসিবি সূত্রে জানা যায়, এসব চাহিদার বিপরীতে টিসিবির এই পাঁচ পণ্যের মজুদ কম। এবারের রমজান মাস ঘিরে টিসিবি সয়াবিন তেল মজুদ করবে চার কোটি ৪০ লাখ লিটার। মসুর ডাল মজুদ করবে ২০ হাজার টন, চিনি মজুদ করবে ২৫ হাজার টন, ছোলা মজুদ করবে ১০ হাজার টন এবং খেজুর মজুদ করবে এক হাজার ৩০০ টন।

তবে পণ্য আমদানি ও মজুদ নিয়ে জানতে চাইলে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, এবারের রোজা ঘিরে টিসিবি মোট চার কোটি ৪০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল মজুদ করছে। মসুরের ডাল মজুদ করছে ২০ হাজার টন। এ ছাড়া ছোলা ১০ হাজার টন, চিনি ২৫ হাজার টন এবং খেজুর এক হাজার ৩০০ টন। তিনি বলেন, ‘এসব পণ্য আমদানির কার্যক্রম এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। কিছু পণ্য আমাদের গুদামে চলে এসেছে, কিছু পাইপলাইনে আছে, আর কিছু পণ্যের এলসি খোলা হয়েছে। আমরা আশা করছি, রোজার আগে সব পণ্য পেয়ে যাব।’

চেয়ারম্যান বলেন, রোজার আগে প্রথম দফায় ৫ মার্চ থেকে এসব পণ্য দেশের ভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, আর রোজা শুরুর পর দেওয়া হবে আরেক দফা। সারা দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ডিলারের মাধ্যমে এসব পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

টিসিবি ১১০ টাকায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল, প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকায় এবং ৭০ টাকায় মসুর ডাল বিক্রি করবে। এই দফায় একজন ক্রেতার কাছে এক কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও দুই লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করবে টিসিবি। সরকারের ভর্তুকি মূল্যের এসব পণ্য ৪২০ টাকার প্যাকেজে নিতে পারবে পরিবার কার্ডধারীরা।

জানতে চাইলে ভোগ্য পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছরই রমজানের আগে টিসিবিকে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল সরবরাহ করে আমাদের প্রতিষ্ঠান। তবে আসন্ন রমজান উপলক্ষে টিসিবি থেকে এখনো কোনো দরপত্র আহ্বান করেনি। তবে জানা গেছে টিসিবি নিজেই এসব পণ্য আমদানি করছে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/01/19/1231657