১৮ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১১:৩৮

রমজানে চতুর্মুখী সঙ্কটের শঙ্কা

ডলারের অভাব বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি নির্বিঘ্নে সরবরাহের পাশাপাশি রোজায় নিত্যপণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চায় ভোক্তারা

চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করলেও ক্যালেন্ডারের হিসাবে আগামী ২৪ মার্চ শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। হাতে সময় মাত্র দুই মাস। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে পণ্য আমদানিতে ভাটা পড়েছে। ফলে রমজান মাসে চতুর্মুখী সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্যাস ও কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। লোডশেডিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট চলছে; রাজধানীর বেশির ভাগ চুলা জ্বলছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রোজার পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রোজায় ব্যবহৃত ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মোটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর আমদানি ঋণপত্র (এলসি) না খুলেই আমদানির সুযোগ দিয়েছে। ডলার সঙ্কটে আমদানিতে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীর টাকা দিয়ে ব্যাংক এলসি খোলার প্রস্তাব দিয়েছে। কয়লার অভাবে এরই মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনিতেই পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তার মধ্যে মার্চ-এপ্রিলের গরমে রমজান মাসে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব এবং সময়মতো নিত্যপণ্য আমদানি করতে ব্যর্থ হলে বাজার সিন্ডিকেট লাগামহীন হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলার সঙ্কটের কারণে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নেয়া সিদ্ধান্ত যথাসময়ে কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়েছে। রোজার ৪ মাস আগ থেকে রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার কথা থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনেক দেরিতে রমজানের নিত্যপণ্য আমদানির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ডলারের অভাবে আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, চুলায় নিয়মিত গ্যাসের সরবরাহ ও পানির সরবরাহ প্রত্যাশা করে মানুষ। কিন্তু কোনোটাই সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।

বিদ্যুৎ সঙ্কট : শতভাগ বিদ্যুতের ঘোষণা দেয়া হলেও বিদ্যুৎ সঙ্কটে ভোগান্তিতে লাখো গ্রাহক। রমজান মাসে (গ্রীষ্ম) লোডশেডিং মোকাবিলা করতে সরকার ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গ্যাসের অভাবে অনেক দিন থেকেই কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। কয়লার অভাবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হতে যাচ্ছে। রামপালের মজুত কয়লা দিয়ে বড়জোর এক সপ্তাহ আর পায়রার মজুত কয়লায় বড়জোর দুই সপ্তাহ চালু থাকতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের সঙ্কটের কারণে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলতে পারছে না এ দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার টাকা ১২ মাস বাকি পড়েছে। ডলার সঙ্কটের কারণে এই অর্থ দেয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্র দু’টি বন্ধ হয়ে গেলে শীতের মধ্যেই লোডশেডিংয়ে পড়বে দেশ। শীতের সময় চাহিদা কমের মধ্যেই লোডশেডিং অথচ মার্চের শেষ দিক ও এপ্রিল মাসজুড়ে রমজান মাসে গরমের সময়। এ সময় প্রচÐ গরমে রোজাদারদের জন্য বিদ্যুৎ আবশ্যক। অথচ লোডশেডিং রোজাদারদের কষ্টের পাশাপাশি পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। পানির চাহিদা বাড়লেও লোডশেডিংয়ের কারণে পানির তীব্র সঙ্কট হবে।

জানা যায়, এলসি খুললে কয়লা আসতে কম করে হলেও ৪০ দিন লাগে। আগামী গ্রীষ্মে লোডশেডিং মোকাবিলা করতে সরকার ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রাখার যে পরিকল্পনা করেছিল তার মধ্যে পায়রা ও রামপাল কেন্দ্র ছিল। এ দু’টি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপদান ব্যাহত হলে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।
স¤প্রতি কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসা শুরু করলেও এসব কেন্দ্রের বিল ও জ্বালানি খরচ দিতে পারছে না পিডিবি। কেন্দ্রগুলো বিদেশ থেকে কয়লা আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলারের জোগানও পাচ্ছে না। এমনকি তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোরও তেল আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশে স্থাপিত বিদ্যুতের ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে ঘণ্টাপ্রতি গড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। গ্রীষ্মে এই চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় ঘণ্টাপ্রতি ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট।

পণ্য আমদানিতে বাধা : রোজায় ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মোটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি, খেজুরের চাহিদা বেশি। এসব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কয়েক দিন আগে রমজানের প্রস্তুতি উপলক্ষে সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রমজানের ভোগ্য পণ্য আমদানিতে সরকারের সহায়তার নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, রমজান উপলক্ষে বাকিতে আমদানি করা যাবে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মোটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর। ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এই সুবিধা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রযোজ্য থাকবে। বর্তমানে ডলার সঙ্কট রয়েছে। এই সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। তাই ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে দেরি করছে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবে। কেউ যদি এলসি খুলতে চান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সহায়তা করবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হবে। এলসি ছাড়াও সরকার পণ্য আমদানির অনুমতি দেবে। তেমন হলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেবো, এলসি লাগবে না।

এদিকে ডলার সঙ্কটের মধ্যে পবিত্র রমজানে ব্যবহৃত খাদ্যপণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন এলসি খুলতে পারছেন না তেমনি এলসি না খুলেও পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ডলারের বদলে টাকা দিয়ে এলসি খোলার প্রস্তাব দিয়েছেন।

গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশে ডলারের সঙ্কট শুরু হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি ডলারের দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১০৭ টাকায় উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সঙ্কট কাটাতে নানাভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি দায় পরিশোধও পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়ছিল। এখন বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও খাদ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। যেসব ব্যাংকের রফতানি আয় নেই, তারা ঋণপত্র খুলছে না।

চুলা জ্বলে না : রাজধানী ঢাকায় গ্যাসের তীব্র সঙ্কট চলছে। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় দিনে গ্যাস থাকে না। আবার কোথাও কোথাও গ্যাস থাকলেও চাপ কম। রাতে গ্যাস এলেও কোনো রাতে ১২টার পর কোনো রাতে ২টার পর গ্যাসের চুলা জ্বলে। ফলে পরের দিনের খাবার গৃহিণীদের আগের রাতে করে রাখতে হয়। বনশ্রী, রামপুরা, মালিবাগে একই চিত্র। শুধু এই এলাকা নয়, দিনভর এমন গ্যাস সঙ্কটের সমস্যায় ভুগছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসাবো, খিলগাঁও, মানিকনগর, মান্ডা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, জুরাইন, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মুগদা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সঙ্কট চলছে বেশ কয়েক দিন ধরেই। এছাড়া যেসব এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস পাচ্ছেন সেখানেও স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। অথচ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে মাসিক বিল পুরোটাই নিচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, প্রতিদিন দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সেখানে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের।

পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ কম থাকার কারণে এই সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত ঘাটতি থাকার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্যাস সঙ্কট এখন জাতীয় সমস্যা। আমরা যে পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছি সেটাই গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করছি। কবে নাগাদ এই সঙ্কটের সমাধান হবে তাৎক্ষণিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিতাস গ্যাসের আবাসিক সংযোগ সংখ্যা প্রায় ২৮ লাখ ৫৮ হাজার। এছাড়া বাণিজ্যিক সংযোগ প্রায় ১২ হাজারের মতো। যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১৫০০ মিলিয়ন। ফলে ৩০০ করে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। যে কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গ্যাস সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইনে গ্যাস সঙ্কট থাকার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযোগ জানানো হলেও সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া শীতের সময় তাপমাত্রা কমে গেলে অতিরিক্ত গ্যাস প্রয়োজন হয়। যে কারণে এসময় এসে গ্যাসের সঙ্কট বেশি দেখা দিয়েছে। বর্তমানে গ্যাস সঙ্কটের পাশাপাশি শীতের কারণে এই সমস্যা তীব্র হয়েছে। রমজান মাসে গ্যাসের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু সরবরাহ বাড়ানো যাবে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) সেলিম মিয়া বলেন, মূলত ঘাটতি থাকার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্যাস সঙ্কট এখন জাতীয় সমস্যা। আমরা যে পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছি সেটাই গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করছি। কবে নাগাদ এই সঙ্কটের সমাধান হবে তাৎক্ষণিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

নিত্যপণ্যের দামে আগুন : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, ডালের দাম। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানির বাড়তি দামের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। চাল, আটা, সয়াবিন তেল, শিশুখাদ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এক বছরে চালের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, সয়াবিন তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ, আটার দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৮৫ টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানির দাম বাড়ায় যাতায়াত ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। খাবারের পেছনেই এখন আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে। ব্যয় সামলাতে অনেকেই পাত থেকে আমিষ কমিয়ে দিয়েছেন। দেশে যখন কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই, তখন পণ্যমূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি কোনোভাবেই অস্বাভাবিক। খাদ্যে স্বয়ংসম্প‚র্ণ দেশে খাদ্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। পণ্যমূল্য বাড়তে বাড়তে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকারের মন্ত্রী ও দায়িত্বশীলদের দাবি সবকিছুই নাগালের মধ্যে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন এবং সরবরাহ বেশি থাকা সত্তে¡ও দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে চলে যায়। এই বাজার নৈরাজ্য বাড়ার একমাত্র কারণ সংশ্লিষ্ট মহলের সীমাহীন উদাসীনতা। কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলে সিন্ডিকেট সদস্যরা এতটা সক্রিয় হয়ে ওঠার সাহস পেত না। ভুক্তোভোগীদের ধারণা, দাম বৃদ্ধির এই সিন্ডিকেটকে ভেতর থেকে পরিচালনা করেন সরকারি দলের একশ্রেণির ব্যবসায়ী-কাম-রাজনীতিক। যাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক অনেক গভীরে প্রোথিত। এখন চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি এবং বাজারে যথেষ্ট পণ্য থাকার পরও দাম বাড়ছে; রমজান মাসে চাহিদা আরো বেড়ে গেলে এবং বাজারে পণ্যের জোগান কমে গেলে সিন্ডিকেটের অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদাররা দাম আরো বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাস করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ চলে উল্টোপথে। আর এই পথে আছে অনৈতিকভাবে মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতা; যা দেশ-জাতি ও রাষ্ট্রকে যেকোনো মুহ‚র্তে ছিটকে দিতে পারে অন্ধকারের অতল গহŸরে। ফলে এলসি খুলে রমজানের নিত্যপণ্য ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মোটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর চাহিদামতো যথাসময়ে আমদানি করতে ব্যর্থ হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন রোজাদারগণ।

https://www.dailyinqilab.com/article/549236