১৮ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১১:২৫

এবার ভাঙল ড্রিমলাইনারের সিটের হাতল

এলইডি মনিটর খুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা

এবার বিমানের ড্রিমলাইনারের কয়েকটি আসনের হাতল ভেঙে ফেলা হয়েছে। সম্প্রতি কে বা কারা বিমানের অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের আসনের হাতলগুলো ভেঙে ফেলে। একটি আসনের সামনে থাকা এলইডি মনিটরও খুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। তবে কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি বিমান। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে-ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। এর আগেও মাত্র কয়েক কোটি টাকা মুনাফা করতে গিয়ে হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছিল বিমানের আটটি উড়োজাহাজের।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম বলেন, যে বা যারা এই ক্ষতি করেছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশনা দিয়েছি। এটা কানাডার অংশে হোক বা বাংলাদেশের অংশে-আমরা দুই দিক থেকেই ক্ষতিপূরণ দাবি করব। বিমানে বসে যা-তা করা যাত্রীদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ড্রিমলাইনার বিমানবহরের সেরা এয়ারক্রাফট। আমরা দোষীকে চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছি।

বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ঢাকা থেকে কানাডার টরন্টো রুটে চলাচল করে। মাঝপথে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট তেল নেওয়ার জন্য তুরস্কের ইস্তানবুলে যাত্রাবিরতি করে এটি। প্রায় ২১ ঘণ্টার যাত্রায় ফ্লাইটে থাকেন ৩০০ জনের মতো যাত্রী।

আসনের হাতল ভাঙা ও মনিটর খুলে ফেলার ঘটনাটি চলতি সপ্তাহের। টরন্টোতে একটি রুটিন চেকআপের সময় ধরা পড়ে এ কাণ্ড। চেকআপের সময় দেখা যায়, বিমানের বেশ কয়েকটি আসন বেহাল। একটি আসনের দুই পাশের হাতলই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ৪১ সি নম্বর সিটের এলইডি মনিটর খুলে ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা, ব্যবহৃত কাটা চামচ, পানির খালি বোতল। বেশ কয়েকটি সিটের হাতল আংশিক ভেঙে ফেলা হয়েছে। কোনোমতে স্কচটেপ দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে হাতলের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ। এর আগে বিমানের আটটি উড়োজাহাজের যাত্রী কেবিনে ভারী কার্গো বহন করায় ক্ষতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ২টি বি৭৩৭ এবং ভাড়ায় আনা ২টি এয়ারক্রাফটের শতাধিক সিটের (আসন) হাতল দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পুরোপুরি এবং আংশিক ভেঙে যায় অর্ধশতাধিক সিট।

বিকল এবং যান্ত্রিক ত্রুটির সৃষ্টি করা হয়েছিল ৭০টির বেশি মুভিং সেটের। এছাড়া নষ্ট করা হয়েছিল ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর, টয়লেট, ফ্লোর, দেওয়াল, খাবার রাখার গ্যালিসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রের। কাদা, রং আর কেমিক্যাল লাগিয়ে নষ্ট করা হয়েছিল উড়োজাহাজের সিটের কাপড়, ভেতরের দেওয়াল এবং দেওয়ালে আঁকা নান্দনিক চিত্রকর্মের। কিন্তু ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও তোয়াক্কা করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো ব্যবস্থা নেননি। উলটো ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ক্যাপ্টেন সাজিদকে একাধিকবার পোস্টিং দিয়ে বড় পদে বসানো হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ক্যাপ্টেন সাজিদের স্ত্রীকে বিমানের পাইলট হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মূলত এ কারণে বিমানে একের পর এক অঘটন ঘটছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ২১টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের যে বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটিতে ২৯৮টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসে ৩০টি, ইকোনমি ক্লাসে ২৪৭ এবং প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসে ২১টি আসন রয়েছে। এটি টানা ১৪ হাজার কিলোমিটার উড়তে পারে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/636015