১৬ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৭:১৮

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় জীবনযাত্রা নিয়ে আতঙ্কিত মানুষ

এমনিতেই সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে নাভিঃশ্বাস দেখা দিয়েছে। তার উপর ভোক্তাদের অনুরোধ, উপরোধ, আবেদন, নিবেদন সব কিছু উপেক্ষা করে সরকার নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হবে চলতি জানুয়ারি মাস থেকেই। এটিকে অনেকেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বললেও এটি আর কত? এর আগে গত নবেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে প্রায় ২০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেটি কার্যকর হয় ডিসেম্বরে। তখন থেকেই বিদ্যুতের খুচরা মূল্য তথা গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বিইআরসি গণশুনানি করে ৮ জানুয়ারি। বলা হয়েছিল, শুনানি-পরবর্তী মতামত জানাতে হবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে, তারপর বিইআরসি নতুন দাম ঘোষণা করবে। কিন্তু সরকার সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারল না, তার আগেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে দাম বাড়িয়ে দিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি যখন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণ যখন দিশেহারা, সে সময় বিদ্যুতের আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা বললে কমই বলা হয়। সরকার বিদ্যুতের খুচরা মূল্যবৃদ্ধির জন্য এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল কেন? বিইআরসির সিদ্ধান্ত ঘোষণার জন্যও অপেক্ষা করতে পারল না, নির্বাহী আদেশ দিয়ে তড়িঘড়ি করে দাম বাড়াল। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণের জন্যই এ তাড়াহুড়া।

সরকারের নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ল ৫ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে, এখন থেকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে। আশঙ্কা হলো, যেহেতু বেসরকারি খাত থেকে প্রতিবছর বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হয়, কাজেই সমন্বয়ের নামে কার্যত নিয়মিত দাম বাড়ানোই হবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত এমন একটি সময়ে নেওয়া হলো, যখন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিতেই মানুষ ব্যাপক চাপে রয়েছে। গত আগস্টে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্টল ও অকটেনের দাম এক লাফে লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে দেয় সরকার। সূত্র মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য এখন ধরাছোয়ার বাইরে।

এমন কোনো নিত্যপণ্য বা সেবা খাত নেই যার দাম বাড়েনি। ইতোমধ্যেই দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ওএমএস ট্রাকের পেছনে মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও বহু লোক প্রয়োজনীয় পণ্য না পেয়ে ফিরে যান। দ্রব্যমূল্যের চাপে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় অবস্থায় রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানোর ফলে জনগণের জীবনযাত্রার সংকট কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবতেও আতঙ্ক হয়। দেশের ব্যবসায়ী মহল, শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মানুষের জীবনযাত্রায় দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

চলতি শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। সারা দেশ ছিল লোডশেডিংয়ের কবলে। শীতের শুরু থেকে লোডশেডিং বন্ধ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। কিন্তু ব্যবসায়ী ও শিল্পকারখানার মালিকরা অভিযোগ করছেন, পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সব ধরনের পণ্য উৎপাদনের খরচ বাড়বে, বিক্রয়মূল্যও বাড়বে, চাপটা গিয়ে পড়বে ভোক্তাদের ওপর।

গত ১৪ বছরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দশবার। এখন খুচরা পর্যায়ে ১১ বারের মতো দাম বাড়ানো হলো। এতদিন বিইআরসি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা পুনর্র্নিধারণের আগে গণশুনানির মাধ্যমে ভোক্তাদের মতামত শুনত এবং মতামত বিবেচনায় নিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হতো। শুনানির পর ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যুতের দাম ঘোষণার বাধ্যবাধকতা আছে। শুনানি-পরবর্তী মতামত জানানোর জন্য এবার ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে নির্বাহী আদেশেই দাম বাড়িয়ে দিল। বিইআরসির মতো সংস্থার কোনো গুরুত্বই আর থাকছে না। বিভিন্ন মহলের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা ভাড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রেখেছে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদিত না হলেও বৈদেশিক মুদ্রায় ভাড়া দিয়ে যেতে হয়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ লোকসান হয়, যার মাশুল দিতে হয় ভোক্তাদের। লোকসান হওয়া সত্ত্বেও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন রাখতে হবে তার সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না সরকারের কাছ থেকে। বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর বলা হয়েছে, এরপর প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয় করা হবে। এর মানেটা কী? তাহলে কি এখন থেকেই প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে? মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা আর কতবার পড়বে? বিদ্যুতের খুচরা মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি স্থগিত রাখা ও পুনর্বিবেচনার দাবি উঠেছে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, জনজীবনে বিরাজমান দুর্ভোগের বিষয়ে সহানুভূতিশীল মনোভাব নিয়ে জনগণের পাশে থাকাই এ মুহূর্তে সরকারের কর্তব্য বলে মনে করছেন তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নতুন করে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। কিন্তু কতিপয় দুর্নীতিবাজরা লাভবান হবে। তিনি বলেন, সরকার দফায়-দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইএমএফের সংস্কার পরামর্শের কারণে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে টুকু বলেন, সরকার নিজেই প্রজ্ঞাপন দিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। টুকু বলেন, আইএমএফের সংস্কার পরামর্শের কারণে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে, সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনগণকে মাশুল দিতে হচ্ছে।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে সবাই, বিশেষত সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। কারণ বিদ্যুতের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। ফলে আরেক দফা বাড়বে দ্রব্যমূল্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের শিল্প খাত। এ অবস্থায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সংকটে পড়বে এ খাত। চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন প্রকট। সেক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। এতে পোশাকশিল্পসহ শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে ব্যাহত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ১৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছিল, সেখানে মাত্র বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। আর এটা গ্রাহকদের অনুকূলে গেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমরা এত খারাপ অবস্থায় আসলাম কেন? সবাইকে এটার বিবেচনা করতে হবে। আমরা খারাপ অবস্থায় আসলাম কারণ, নিজেদের আমরা আমদানিনির্ভর করে ফেলছি। নিজেদের গ্যাস ঠিকমতো আহরণ করিনি। গ্যাস কোথায় বেশি আর কোথায় কম ব্যবহার করতে হবে, সেই বিষয়গুলো ঠিক করা হয়নি।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ১০ বছরে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১২৫ শতাংশ, কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম যেভাবে হু হু করে বেড়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে ১৭ কোটি সাধারণ জনগণের স্বার্থ চিন্তা না করে বিদ্যুতের আর এক দফা মূল্য বৃদ্ধি প্রস্তাব অযৌক্তিক। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি যেভাবে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, ঠিক একইভাবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণেও জনজীবনে অস্থিরতা বাড়াবে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম ফের বৃদ্ধি মধ্যবিত্তসহ সব মানুষের জন্য আরেকটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই মানুষ বিদ্যুৎ ঠিকমতো পাচ্ছে না। আবার নতুন করে দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আর্বিভূত হবে এই দাম বৃদ্ধি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি যেভাবে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, ঠিক একইভাবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণেও জনজীবনে অস্থিরতা বাড়াবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের শর্ত অনুসারে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্যই এই মূল্যবৃদ্ধি। প্রশ্ন হলো, ভর্তুকি কেন দিতে হচ্ছে এবং সেই ভর্তুকির টাকা কোথায় যাচ্ছে, কারা পাচ্ছে? ভর্তুকি দিতে হচ্ছে; কারণ, আমদানিনির্ভর ও ব্যয়বহুল তরল জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি মালিকানার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে পিডিবিকে। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্রমবর্ধমান ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা যত বেড়েছে, পিডিবির লোকসান তত বেড়েছে। আর সেই লোকসান কমানোর কথা বলে গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১তমবারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে কিন্তু লোকসান ও ভর্তুকি কমেনি বরং বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চাপ তৈরি হয়েছে।

সূত্র মতে, ২০১২-১৩ সালে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট, তখন পিডিবির লোকসান ছিল ৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এরপর ২০১৭-১৮ সালে উৎপাদনক্ষমতা ১৫ হাজার ৪১০ মেগাওয়াটের বিপরীতে পিডিবির লোকসান দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২১-২২ সালে ২১ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিপরীতে লোকসান হয় প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এই লোকসানের টাকা সরকারকে ঋণ বা ভর্তুকি হিসেবে পিডিবিকে দিতে হয় যেন পিডিবি তা বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে দিতে পারে। ভর্তুকি বা ঋণের পরিমাণ হ্রাস করার জন্যই এভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের পকেট থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। এখন আইএমএফের শর্ত মেনে হোক আর পিডিবি তথা সরকারের লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য হোক, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লোকসান বাড়বে জনগণের। জনগণের পকেট থেকে আগের চেয়ে আরও বেশি পরিমাণ অর্থ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে গিয়ে ঢুকবে। আলটিমেটলি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির অর্থ হলো, লোকসানটাকে সহনীয় রেখে পিডিবি কর্তৃক বেসরকারি মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার মেকানিজমটাকে অক্ষুন্ন রাখা।

জ্বালানি পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক কল্লোল মোস্তফা বলেন, আইএমএফ অনেক ধরনের সংস্কারের কথাই বলে, কিন্তু জনগণের অর্থে বেসরকারি খাতের অতি মুনাফার বিরুদ্ধে আইএমএফের কোনো অবস্থান থাকে না। আইএমএফের অ্যাজেন্ডা হলো দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ইত্যাদি পাবলিক সেক্টর বা সর্বজন খাতকে হয় বেসরকারিকরণ করা অথবা ভর্তুকি কমিয়ে বেসরকারি খাতের মতো মুনাফাকেন্দ্রিক নীতিতে পরিচালনা করা যেন এগুলো দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত হয়। কাজেই আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য গেলে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর শর্ত দেবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হলো রিজার্ভ কমতে কমতে আইএমএফের কাছে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন? কারণ, নানান অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আইএমএফের শর্তের জালে ঢোকানোর ব্যবস্থা ক্ষমতাসীন সরকারই করেছে।

https://dailysangram.com/post/513853