১৫ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১০:৫৪

রমজানের আগেই ভাবাচ্ছে নিত্যপণ্য

দেশে চিনির সংকট চলছে। চাহিদা অনুযায়ী চিনি মিলছে না। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্য তেলের দামও চড়া। যদিও এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ১০০ ডলার। তবে খুচরা পর্যায়ে এই দামের কোনো প্রভাব নেই। ভোক্তারা দাম কমার কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম ও সরবরাহ পুরোপুরি কোম্পানির হাতে নির্ভর। দাম কমানোর ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো গড়িমসি করে। এদিকে ডলার সংকটে ব্যাংক আমদানিতে গড়িমসি করার কারণে আসন্ন রমজান মাসের আগেই নিত্যপণ্য ভাবাচ্ছে বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা।

তারা রমজান মাসে অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাও করছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। গত বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে এই অস্থিরতা শুরু হয়। পরে সরকার গত সেপ্টেম্বরে চিনির দাম বেঁধে দেয়। পরে আরও দুই দফা চিনির দাম বাড়ায় সরকার। তারপরও বাজারে এখনো চিনির সংকট কাটেনি। আর যেসব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে তাও বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে সরকার খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১০২ ও প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনির দাম ১০৭ টাকা বেঁধে দেয়। তবে খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১১৪-১১৫ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি থেকে তাদের চিনি সরবরাহ করছে না। মাসে এক-দুই বস্তা চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে তা দুই-একদিনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। এদিকে ব্লুমবার্গের তথ্য বলছে, গত এক বছরে পরিশোধিত চিনির দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ, অপরিশোধিত চিনির দাম সাড়ে ৬ শতাংশ।

এদিকে গত বছরের মার্চে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম ওঠে ১ হাজার ৯৫৬ ডলার। সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম নেমে এসেছে ১ হাজার ২০০ ডলারে। তবে খুচরা পর্যায়ে লিটারে ১৮৫ টাকার নিচে মিলছে না সয়াবিন তেল। টিসিবি’র দৈনিক বাজার দরের চিত্রেও প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৮৭ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। কিন্তু ডলারের দাম বেড়েছে। সেক্ষেত্রে যে পরিমাণ তেলের দাম কমেছে তাতে খুব একটা প্রভাব পড়ছে না। তাই গত বছরের তুলনায় তেলের দাম কমছে না ডলারের দাম বাড়ায়। সরবরাহ চেইন ও উৎপাদনে কেউ যেন কারসাজি করতে না পারে, আমরা সেজন্য মনিটরিং করছি।

ডলার সংকটে এলসি (ঋণপত্র) খোলার হার কমার কারণে ভোগ্যপণ্যের আমদানিও কমেছে। এতে করে আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান মাসে অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে রোজায় কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল রাখাসহ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, মটর, পিয়াজ, মসলা, খেজুরের সহনীয় পর্যায়ে রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব পণ্যের আমদানিতে ব্যাংকগুলোকে ঋণপত্র খোলা সহজতর করার নির্দেশনা দিয়েছে। রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে (এলসি মার্জিন) ছাড়ের নির্দেশনাও দেয়া হয়।

আমদানিকারকরা বলছেন, কিছু বড় আমদানিকারক ওই সুবিধা পাচ্ছেন। বাকিদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে এলসি খুলতে গড়িমসি করেই চলেছে। এর ফলে ভোগ্যপণ্যের আমদানি, সরবরাহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ একটি গোষ্ঠীর হাতে পুঞ্জিভূত হতে চলেছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সব আমদানিকারক সমান সুযোগ না পেলে আগামী রমজানে ভোগ্যপণ্যের সংকটের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।

তথ্যমতে, সারা দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২১ লাখ টন। যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। তবে রোজার মাসে ভোজ্য তেলের চাহিদা ৪ লাখ টনের মতো।
আমদানিকারকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়তে থাকে। তার প্রভাব এখনো অব্যাহত আছে। একই অবস্থা চিনির ক্ষেত্রেও। সারা বছরের জন্য ১৮ লাখ টন চিনির প্রয়োজন। এর মধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার মাসে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের রমজানে চাহিদা মেটাতে তেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ বেশি প্রয়োজনীয় ৭টি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের দরকার হবে। ৯৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে ৭ লাখ টন ভোজ্য তেল, ৮১ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয়ে ২২ লাখ টন গম এবং ৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে ৮ লাখ টন চিনি আমদানির প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া ২ লাখ ১০ হাজার টন ছোলা আমদানিতে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, ১ লাখ ৫৭ হাজার টন মসুর ডাল আমদানিতে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ৫৯ হাজার টন খেজুর আমদানিতে ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় হবে।

তবে এবারের রমজান মাসে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না। অতি দরকারি পণ্যগুলোর মজুত রয়েছে বলে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্‌শি গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতেও কোনো জটিলতা নেই।


https://mzamin.com/news.php?news=38432