১৪ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৯:২৮

দুই বছরের কাজ শেষ করতে এক দশক

রাজস্বপদে রেলের ক্রসিং কিপার নিয়োগে জটিলতা

৯৭ কোটি টাকা থেকে এখন ২৯১ কোটি টাকায়

দেশের অরক্ষিত রেল লেভেল ক্রসিং সংস্কারে বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মান উন্নয়ন হচ্ছে না। অথচ সমানে বাড়ছে খরচ ও মেয়াদ। ৬৭২টি রেল লেভেল ক্রসিং দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার ও প্রহরী নিয়োগের ২ বছরের কাজ এখন ১০ বছরে গিয়ে ঠেকেছে। মূলত গেইটকিপার নিয়োগ রাজস্ব প্রক্রিয়ায় করতেই জটিলতা। তবে দু’প্রকল্পের ভৌত কাজ নভেম্বরেই শতভাগ শেষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে গেইট কিপারদের পদ রাজস্ব খাতের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগ না করে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ করা হয়। ফলে বর্তমানে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে বর্তমানে রেলের লেবেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা দুই হাজার ৪৯৪টি। এর মধ্যে মাত্র ৪০০টি ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিবন্ধক ও প্রহরী (গেটম্যান) আছে। বাকি দুই হাজার ৯৪টি রেলক্রসিংই অরতি। প্রহরী ছাড়াই চলছে এসব রেল ক্রসিং। কিছু ক্রসিংয়ে নামমাত্র প্রতিবন্ধক থাকলেও সেগুলো দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে এক হাজার ২৪৯টি ক্রসিং গেইট রয়েছে। যার মধ্যে অনুমোদিত ৯৭৮টি। আর ২৭১টি অনুমোদনহীন। অনুমোদিত ৯৭৮টি ক্রসিং গেইটের মধ্যে মাত্র ২৭১টিতে প্রহরী রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের এক হাজার ২৮টি বা ৮৩ শতাংশ ক্রসিং গেইটে কোনো প্রহরী নেই।

অন্যদিকে, রেলের পূর্বাঞ্চলের লেবেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ২৪৫টি। যার মধ্যে ৪৩৪টি অননুমোদিত এবং ৮১১টি অনুমোদিত। এখানেও প্রায় ১৩০টি ছাড়া বাকিগুলোতে কোনো ধরনের প্রহরী নেই। ফলে এসব অধিকাংশ গেইটে নিরাপদ ট্রেন চলাচলের জন্য কোনো গেইটম্যান বা প্রহরী এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রেল লাইনের ওপর দিয়ে সড়ক তৈরির সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে যেসব ক্রসিংয়ের সৃষ্টি করেছে, সেটাই অননুমোদিত লেবেল ক্রসিং। তবে রেলওয়ের অনুমোদিত রেলক্রসিংয়েরও ৮০ শতাংশ কোনো ধরনের প্রহরী ছাড়াই চলছে। এসব রেলক্রসিংয়ে একদিকে রেল আসছে আবার অন্যদিকে গাড়ীও চলাচল করছে। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার ক্রসিংগুলো যা-ও আছে সেগুলোতে গেইট ব্যারিয়ার, চেক রেল, চেক ব্লক নেই।

রেলওয়েরই তথ্য বলছে, পূর্বাঞ্চলের লেবেল ক্রসিংয়ের গেইটগুলোকে পুনর্বাসন ও মান উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৫ সালের জুনে। ৪৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা খরচে বাস্তবায়ন হবে ২০১৭ সালের জুনে। দুই বছর ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে প্রথমে ৫ বছর এবং পরে ৮ বছরে উন্নীত করে। ব্যয় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১০৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা করা হয়। কিন্তু তাতেও দুই বছরের কাজ সমাপ্ত হয়নি। প্রায় ৫০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এই প্রকল্পের মেয়াদ এখন আবার ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

একইভাবে পশ্চিমাঞ্চলের লেবেল ক্রসিংয়ের গেইটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৫ সালের জুনে। ক্রসিং সংস্কার ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচে বাস্তবায়ন হওয়ায় কথা ২০১৭ সালের জুনে। দুই বছর ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়ায় দু’দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে প্রথমে ৫ বছর এবং পরে ৮ বছরে উন্নীত করে। ব্যয় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা করা হয়। কিন্তু তাতেও দুই বছরের কাজ সমাপ্ত হয়নি। প্রায় ৫০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এই প্রকল্পের মেয়াদ এখন আবার ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। প্রকল্পের খরচ ১৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এটা হবে তৃতীয় সংশোধনী।

এদিকে, এ সংক্রান্ত প্রকল্পের একপর্যালোচনায় রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলছেন, গেইট কিপারদের পদ রাজস্ব খাতের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগ না করে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ করা হয়। এর ফলে বর্তমানে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশে ৩৭১টি রেলক্রসিংয়ে প্রহরী আছেন। এদের অন্তত ২৫০ জনই চুক্তিভিত্তিক। অনেকে দৈনিকভিত্তিক মজুরিতে কাজ করেন। তাদের প্রশিক্ষণও নেই। ২০০৫ সালের পর থেকে প্রহরী নিয়োগ বন্ধ আছে। সম্প্রতি নিয়োগের উদ্যোগ নিলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মামলা করে তা আটকে দেন।

আর ভৌত অবকাঠামো বিভাগের উপ-সচিব মীর আহমেদ তারিকুল ওমর পর্যালোচনা সভায় বলেন, রেলক্রসিং দুর্ঘটনা রোধে গেটম্যানদের রাজস্ব বা পরিচালন বাজেট থেকে প্রকল্পের জনবলের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের সুযোগ না থাকলেও শুধু বেতন ভাতাদি প্রদানের জন্য পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের দুটি প্রকল্পের সংশোধন দরকার। প্রকল্প দুটি সংশোধনের জন্য আবার পিইসি সভার আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাতে পারে।

এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের যুগ্ম-সচিব জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বশেষ অনুমোদিত ৪৭ হাজার ৬৩৭ জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোতে উল্লিখিত প্রকল্পদ্বয়ে অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত গেইটকিপারের পদ অন্তর্ভুক্ত নেই। আর এ কারণে রাজস্ব বা পরিচালন বাজেট থেকে প্রকল্পের জনবলের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের সুযোগ নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/720212