১৩ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ৭:১৭

ডলার সংকটে মন্দা যাচ্ছে খুলনার আমদানি ব্যবসা

বিপাকে ব্যবসায়ীরা

ডলার সংকটে মন্দা যাচ্ছে খুলনার আমদানি করা পণ্যের ব্যবসা। গত অক্টোবর মাস থেকে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না। যার কারণে গত ৩ মাস ধরে অধিকাংশেরই ব্যবসা বন্ধ।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি নির্ভর পণ্যের প্রত্যেকটি ব্যবসার সঙ্গে আমদানি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা, আনলোডের শ্রমিক, পণ্য আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক, কার্গো চালক, শ্রমিকসহ সবারই আয় কমে গেছে। কষ্টে দিন কাটছে সবার।

আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য পরিমাণে কম হলে বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ট্রাকে খুলনায় আসে। এর বাইরে অন্য দেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যই মোংলা অথবা চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সড়কপথে অথবা নৌপথে খুলনায় আসে। এর মধ্যে যেসব পণ্য পরিমাণে বেশি সেগুলো মোংলা বন্দরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে করে নদী বন্দরে খালাস হয়। পরে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি একটি চেইন ব্যবসা। আমদানির সঙ্গে লাইটার জাহাজের মালিক-শ্রমিক, নদী বন্দরের শ্রমিক, ঠিকাদার, যন্ত্রপাতি ব্যবসায়ী, পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক মালিক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা জড়িত। আমদানি কমে যাওয়ায় সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি খুলনা নদী বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, ঘাট প্রায় জাহাজ শুন্য। পণ্য আনলোডের তেমন তাড়া নেই। শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

খুলনার চাল, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কাজী এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী নিজাম উদ্দিন সুজন বলেন, বাজারে কয়লা ও পাথরের চাহিদা রয়েছে কিন্তু ব্যাংকগুলো সে অনুযায়ী এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না। এ বছর পাথর আমদানি করা যায়নি, কয়লা আমদানিও খুব সীমিত।

ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত ইটভাটায় কয়লা বেশি ব্যবহৃত হয়। কয়লা সংকেট খুলনার অনেক ইটভাটা এবার উৎপাদনে যায়নি। বাকিগুলো সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন করছে। ফলে ইটের দাম বাড়ার আশংকা রয়েছে। অন্যদিকে নির্মাণ কাজের অন্যতম উপকরণ পাথর। সংকটের কারণে বেশি দামে সড়ক পথে স্থল বন্দর দিয়ে পাথর আনা হচ্ছে। এতে লোকসানে পড়ছেন ঠিকাদাররা।

খুলনায় গৃহস্থালী ব্যবহারিক ও বৈদ্যুতিক পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে। খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মাদিয়া ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মনজুরুল কাদির মঞ্জু বলেন, রাইস কুকার, রুম হিটার, অন্যান্য কুকারসহ গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এখন নিত্য প্রয়োজনীয়। বাজারে এসবের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় গত কয়েকমাস পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানের স্টক প্রায় শেষ। ক্রেতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন। বেচাকেনা বন্ধ থাকলেও খরচ তো বন্ধ নেই। প্রতি মাসেই লোকসান বাড়ছে।

ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আল্লাহর দান ফ্রুট এজেন্সির প্রধান কাজী সানোয়ার হোসেন বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে প্রতিদিন ৩৫০/৪০০ বক্স ফল বিক্রি হতো। ফল লোড-আনলোডে কাজ করতেন প্রায় ২০০ শ্রমিক। এখন বিক্রি কমে গেছে, শ্রমিকরাও বেকার সময় কাটাচ্ছে।

এবি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অঞ্চল প্রধান আরিফ কামাল চৌধুরী বলেন, এলসি একেবারে বন্ধ নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে ডলার প্রাপ্তি সাপেক্ষে এলসি খোলা হচ্ছে। এই কাজে সময় লাগছে। অন্যান্য ব্যাংকের খুলনা শাখা প্রধানদের বক্তব্য প্রায় একই।

https://dailysangram.com/post/513572