১১ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১১:৩১

দাম জটিলতায় একাদশের বই নিয়েও অনিশ্চয়তা

মুদ্রণকারীরা বইয়ের দাম বাড়াতে চায় ২৭ ভাগ

একাদশ শ্রেণীর নতুন বইয়ের দাম নির্ধারণ নিয়ে পুস্তক প্রকাশক ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। ফলে একাদশের ক্লাস শুরুর আর মাত্র এক মাসেরও কম সময় বাকি থাকলেও যথাসময়ে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পাওয়া অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কাগজের দাম বাড়ার কারণে দেশেও নতুন বইয়ের দাম বাড়াতে চায় পুস্তক মুদ্রণকারীরা। যদিও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক বিনামূলে বিতরণ করা হয় কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বই কিনতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে একাদশের ক্লাস শুরু হওয়ার ঘোষণা থাকলেও এখনো বই পাওয়া নিয়েই জটিলতার অবসান হয়নি।

এ দিকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব বইয়ের দাম আগের বছরের চেয়ে ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন মুদ্রণকারীরা। যদিও এ প্রস্তাবে রাজি নয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবির অনুমোদিত চারটি বইয়ের দাম ১৫ শতাংশ বাড়াতে রাজি হলেও তা মানতে রাজি হননি মুদ্রণকারীরা। সে কারণে নির্ধারিত সময়ে উচ্চ মাধ্যমিকের নতুন বছরের বই যথাসময়ে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী দুই ফেব্রুয়ারি থেকে এ স্তরের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিকের বই তৈরির সঙ্কট নিরসনে গত সোমবার এনসিটিবির সাথে মুদ্রণকারীদের বৈঠক হয়। কাগজ সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে সব বইয়ের দাম ২৭ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। এ প্রস্তাবে রাজি নয় এনসিটিবি। বইয়ের দাম বেশি বাড়ালে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি হবে। সে কারণে এনসিটিবির অনুমোদিত বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি ও বাংলা সহপাঠ বইয়ের দাম ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধিতে রাজি হলেও এটি মানতে নারাজ মুদ্রণকারীরা। অপর দিকে আগামী মাসের শুরু থেকেই একাদশের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কবে থেকে বই ছাপা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। ২৭ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে বই ছাপাতে নারাজ মুদ্রণকারীরা। তারা নিজেদের দাবিতে এখনো অনড়।

এ দিকে পুস্তক প্রকাশক, বিক্রেতা ও মুদ্রণকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী ডলার সঙ্কট এবং কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই নতুন বছরে বইয়ের দাম বাড়বে। অন্য দিকে পুস্তক প্রকাশের ক্ষেত্রে শুধু কাগজই একমাত্র উপকরণ নয়। এর সাথে আরো অনেক উপকরণই প্রয়োজন এবং এসব উপকরণের প্রত্যেকটিরই দাম বেড়েছে শতভাগ। শুধু কাগজের দামই গত তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে আড়াইশ ভাগ। আগে যে কাগজ কেনা যেত ৪০ হাজার টাকায়, এখন ওই কাগজ কিনতে হচ্ছে এক লাখ টাকায়। অপরদিকে পুস্তক প্রকাশের অন্যান্য উপহরণ যেমন গ্লু, গাম, সুতা, প্লেট, কালি, কেরোসিন ও অন্যান্য সব মেটারিয়ালসের কাঁচামালের দাম বেড়েছে একশ ভাগের বেশি। তাই সঙ্গত কারণেই এ বছর বইয়ের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই দাম বাড়ানোর মাত্রাটি আসলে কত শতাংশ হবে তা নিয়েই মূলত এনসিটিবি ও মুদ্রণকারীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা চাইছি একটি যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে বইয়ের দাম বাড়াতে, যাতে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের ওপর খুব একটা চাপ না পড়ে। সেই বিবেচনায় কাগজ এবং অন্যান্য উপকরণের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়লেও আমরা বইয়ের ফর্মাপ্রতি ২৭ শতাংশ দাম বাড়াতে প্রস্তাব করেছি। কিন্তু এনসিটিবি এই প্রস্তাবে এখনো সাড়া দেয়নি।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, কাগজের দাম বেড়েছে এটা সত্য। তবে বইয়ের দাম কতটুকু বাড়ানো হবে এটা বাজারমূল্য ও বইয়ের ছাপা খরচ ও অন্যান্য ব্যয় সমন্বয় করেই দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রকাশকরা যেভাবে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন এটা অবাস্তব। তাই আমরা একটি সমঝোতার মধ্যে পৌঁছার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, বইয়ের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে এনসিটিবি কাগজ-কালিসহ অন্যান্য মুদ্রণসামগ্রীর বাজার যাচাই করেন। এ কারণ ১৫ শতাংশ দর বাড়ানোর কথা প্রকাশকদের জানান তারা। কিন্তু তারা এতে রাজি হয়নি। অপর দিকে পুস্তক মুদ্রণকারীরা জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ের দাম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য তারা জাতীয় প্রতিযোগিতা কমিশনে আবেদন করেছেন। সেখানে এনসিটিবির একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/719526