১০ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৪৭

ধান সংগ্রহে হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা

৩ লাখ টনের মধ্যে দেড় মাসে সংগ্রহ ১০ হাজার ৬ টন * অ্যাপে ক্রয়, ব্যাংকে মূল্য পরিশোধ, কম দাম কৃষককে নিরুৎসাহিত করছে

পদ্ধতিগত জটিলতা ও ব্যাংকিং ঝামেলা এবং উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছে না। এ সুযোগে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকের বাড়ি গিয়ে নগদ টাকায় ধান কিনছে। অ্যাপের ঝামেলা, টাকার জন্য ব্যাংকেও দৌড়াতে হয় না, দামও বেশি কাজেই কৃষক বেসরকারিতেই খুশি। এদিকে চালের বাজার বেশি হওয়ায় মিলাররা সরকারি গুদামে চালও দিতে চাচ্ছে না। এসব কারণে এবার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা আছে। বিশেষ করে ধান সংগ্রহের সাফল্য নিয়ে খোদ খাদ্যমন্ত্রীই সংশয়ে আছেন।

চলতি আমন মৌসুমে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। ৫ লাখ টনের মধ্যে গত দেড় মাসে (রোববার পর্যন্ত) সরকারি গুদামে ঢুকেছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন। ৩ লাখ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে একই সময় পর্যন্ত ১০ হাজার ৬ মেট্রিক টন ধান সরকারি গুদামে ঢুকেছে। এখন সরকার বলছে কাক্সিক্ষত পরিমাণ ধান পাওয়া যাবে না। এবার দেশে রেকর্ড পরিমাণ আমন ধান উৎপাদন হয়েছে। তারপরও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধান-চাল সংগ্রহে রীতিমতো হোঁচট খাচ্ছে সরকার। কী কারণে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারছে না তা খুঁজতে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে।

সংগ্রহ পরিস্থিতি জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার রোববার যুগান্তরকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো চাল পেয়ে যাব। তবে ধান পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাওয়া যাবে না জেনেও প্রতিবছর ধান ক্রয়ের সংগ্রহ অভিযান কেন করা হয়-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা ধান না কিনলে কৃষক ধানের দাম পাবে না। সরকার একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয়। বেসরকারি ক্রেতারা তা থেকে বেশি দামে কেনে। এতে কৃষককে লোকসান দিতে হয় না। উৎপাদন ব্যয়সহ লাভজনক অবস্থানে থাকে কৃষক। মন্ত্রী আরও বলেন, কোনো মিলমালিক যদি ধানের পরিবর্তে চাল দিতে চায় তা নেবে সরকার। মন্ত্রী বলেন, আমরা চাইলেই মিলারদের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থা নিতে পারি না। কারণ তারা তো ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে নিয়ম মেনেই ব্যবসা করে। আমরা যতটুকু সম্ভব কঠোর অবস্থানে আছি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, অনেক মিলার নানান অজুহাতে শেষ পর্যন্ত সরকারকে চাল দিতে চুক্তির আওতায় আসেননি। কৃষকরা সরকারকে ধান না দেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অ্যাপসে ধান কেনা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা। নির্দিষ্ট মাত্রার শুকনো ধান বিক্রি ইত্যাদি। তারা অ্যাপসের ঝামেলায় যেতে চাচ্ছে না। অপরদিকে প্রতি কেজি ধানের দাম সরকার নির্ধারণ করেছে ২৮ টাকা। বাস্তবে বাজারে প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৪ টাকায়। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেশি পাচ্ছে কৃষক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. চাল দেওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এবার চুক্তি করছে না মিলাররা। খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, সরকারকে চাল দিতে পারে এমন চুক্তিযোগ্য চালকল মালিকের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৮০ জন। চলতি মৌসুমে আমন সংগ্রহের জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদে চুক্তিভুক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯১ জন। অর্থাৎ ৫ হাজার ৫৮৯ মিলমালিক বারবার সময় দিয়েও চুক্তি করেননি।

খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৮ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মাসিক সমন্বয় সভায় বরাদ্দ অনুযায়ী যেসব মিলার চুক্তি করেননি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের (ডিসি-ফুড) বলা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী কারসাজির সঙ্গে জড়িত চালকলের জামানত বাজেয়াপ্তসহ কালোতালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, খাদ্য নিয়ে বিশ্বময় একটা অপবাণিজ্য চলছে। বৈশ্বিকভাবে সাধারণ মানুষের খুদা জিম্মি করে উচ্চমূল্যে খাদ্য বিক্রির প্রবণতা বেড়ে গেছে। যা বিগত ১৫-২০ বছর আগে চিন্তাই করা যেত না। এই অপচর্চার মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে গেছে। সরকার চাইলেও সবকিছু করতে পারে না। সবাই আমদানির দিকে ঝুঁকছে। কারণ আমদানি মানে বাড়তি মূল্য। বাড়তি মূল্যে ক্রয় করলে বাড়তি লাভ থাকে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/633291