১০ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৪৬

ঋণের অর্থ না পাওয়ায় প্রকল্প শেষ অসমাপ্ত রেখেই

-চার বছরেও আসেনি ভারতীয় এলওসির অর্থ


প্রত্যাশিত ঋণ সহায়তার টাকা না পাওয়ায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখেই শেষ করতে হচ্ছে। ভারতীয় ঋণের আশায় চার বছর ধরে সরকারি অর্থায়নে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রকল্পটি। চার বছরেও এলওসির টাকা না পাওয়ায় এখন অসমাপ্ত প্রকল্পটি সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ঠিকাদার নির্বাচন এবং দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। সৌর বেজ স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটক নেটওয়ার্ক কভারেজ শক্তিশালীকরণের এই প্রকল্পে এলওসিতে ২৫৫ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল ভারতের। বাংলাদেশ সরকারের অর্থে প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ কাজ চার বছরে সমাপ্ত করে এখন অসমাপ্ত প্রকল্পকে সমাপ্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন কমিটির পর্যালোচনা তথ্য থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের হাওর, বন, দ্বীপ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি এলাকায় এখনো আধুনিক উচ্চগতিসম্পন্ন থ্রিজি প্রযুক্তির টেলিযোগাযোগ সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের সুযোগ না থাকায় এসব স্থানে টাওয়ার বা বেজ স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে সেলুলার নেটওয়ার্ক চালু করা কৌশলগতভাবে দুরূহ ছিল। তা ছাড়া ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে বেজ স্টেশন স্থাপন করা হলে ঘন জনবসতি না হওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হবে। এ জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও পর্যাপ্ত ছিল না। তাই সৌর বেজ স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটক নেটওয়ার্ক কভারেজ শক্তিশালীকরণ প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪০৬ কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২৫ কোটি ২৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। বাকি ২৫৫ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য থেকে জোগান দেয়ার কথা। পাশাপাশি টেলিটকের নিজস্ব অর্থায়ন প্রায় ২৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি দুই বছরে সমাপ্ত করার কথা। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদ। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দুই বছর বাড়ানো হয়। চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ বলে প্রকল্প পরিচালকের দেয়া তথ্যে জানা গেছে।

পর্যালোচনায় প্রকল্প পরিচালক জানান, ইপিসি ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাকযোগ্যতা নির্ধারণ প্রক্রিয়াসহ দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। প্রকল্প সহায়তার ২৫৫ কোটি টাকায় বিভিন্ন অঙ্গ বাস্তবায়নে ভারতের এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কর্তৃক প্রেরিত ঠিকাদারের তালিকা অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হয়। মাত্র একজন ভেন্ডর বিড করেন। ফলে ওই টেন্ডার নন-রেসপন্সিভ হয়। টার্নকি প্রকল্পে ভারতের শর্তানুযায়ী ৭০ শতাংশ উপকরণ ভারত থেকে আমদানির বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যার দাম বেশি হওয়ায় ঠিকাদারের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। পরে ত্রিপক্ষীয় সভা করে দাম কমানোর চেষ্টা করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে দুবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। হাওর এলাকার পরিবর্তে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদকাল চার বছর অতিক্রম হলেও ভারতীয় সাহায্য পাওয়া যায়নি। ফলে জিওবির আওতায় যে কাজগুলো সমাপ্ত করার কথা ছিল তা কেবলমাত্র আংশিক সমাপ্ত করা হয়েছে। তাই প্রকল্পটি সমাপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সকল অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও সময় স্বল্পতার কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দের অর্থ ছাড় করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু সকল কাজ হয়ে গেছে, তাই সম্পন্নকৃত কাজের অপরিশোধিত বিলসমূহ পরিশোধ করার জন্য প্রকল্পের অর্থ ছাড় করা প্রয়োজন। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো প্রয়োজন, ফলে আগামী ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
পর্যালোচনায় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ প্রকল্পের ব্যাপারে বলছে, ভারতীয় তৃতীয় লাইন এলওসিতে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল তা সেভাবে পাওয়া যায়নি। নেটওয়ার্ক যেভাবে স্থাপন করার কথা ছিল, সেভাবে স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের কাজ ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন। যেহেতু প্রকল্পের কাজ ৫৫ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে, বাকি কাজ অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে, সেহেতু প্রকল্পটি অসমাপ্ত অবস্থায় সমাপ্ত করা যেতে পারে।

মূল্যায়ন সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিৎ কর্মকার পর্যালোচনা সভায় বলেছেন, প্রকল্পটি এলওসিতে বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো নজির হতো। তবে বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অসমাপ্ত অবস্থায় সমাপ্ত করার উদ্যোগে নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজগুলো চলমান অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় যথাযথভাবে বাস্তবায়নে টেলিটককে আরো উদ্যোগী হতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/719288