১০ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৪৪

আকুর দায় শোধে আরো কমে গেল রিজার্ভ

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের পর কমে গেলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে নেমেছে ৩২.৫ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আকুর দায় পরিশোধ করা হয়েছে ১.১২ বিলিয়ন ডলার। তবে, আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী রফতানি উন্নয়ন তহবিলসহ (ইডিএফ) বিভিন্ন তহবিলে রিজার্ভ থেকে জোগান দেয়া অর্থ বাদ দিলে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে নেমেছে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলারে।

জানা গেছে, প্রতি দুই মাস পর পর আকুর দায় পরিশোধ করতে হয়। আকু হলো আন্তঃদেশীয় এক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। আকুর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর কেন্দ্রীয় কার্যালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত জুলাই-আগস্টে ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার আকুর দায় পরিশোধ করা হয়েছে। আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়েছে ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার। আর গত দুই মাসে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বরে পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সরকারি কেনাকাটা বিশেষ করে জ্বালানি তেল, সার, বীজসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে সরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করতে হয়। গতকালও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে গতকাল পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার। এভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ না বেড়ে বরং কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে আরো দেখা যায়, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার। গত ২৮ ডিসেম্বরে তা কমে নেমেছে ৩৩.৮৩ বিলিয়ন ডলার। গতকাল তা আরো কমে নেমেছে ৩২.৫ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যেমন স্বল্প মেয়াদি আমদানি ব্যয় পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড বা জিটিএফ থেকে অর্থ ছাড় সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ তহবিল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার ও ইউরোর মাধ্যমে অর্থ ছাড় করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি ইডিএফে বিকল্প ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে রফতানিকারকরা স্থানীয় মুদ্রায় স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ডলার কিনে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করতে পারবেন, যা আগে ইডিএফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় সরবরাহ করা হতো। এ ছাড়া আকুর দায় প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু বাকিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়ায় এ দায় ১.১২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা চলতি সপ্তাহে ছাড় করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এসব পদক্ষেপ না নেয়া হলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরো কমে যেতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/719311