১০ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৪০

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমেছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) আরও কমেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে রিজার্ভ। গতকাল সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী বর্তমান রিজার্ভ থেকে আরও ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। এতে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। আইএমএফ’র মানদণ্ড অনুসারে, দেশের মজুতকৃত রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণ এবং রিজার্ভ থেকে দেশীয় প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যয় বাদ যাবে। তবে সরকার এখন আইএমএফ এবং নিজস্ব অর্থাৎ দুই ধরনের হিসাবই রাখছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন আমদানিতে বাণিজ্যিক ঋণপত্র (এলসি) কমলেও আগের দায় পরিশোধে কিছুটা চাপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসে আমদানি দায় পরিশোধ বেড়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। আর একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে।
আমদানি দায় পরিশোধে গত বছর রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসবের প্রভাবে কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। আর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল রিজার্ভ। করোনার প্রভাব আর রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে রিজার্ভ কমতে থাকে। সবশেষ রিজার্ভ ৩৩ থেকে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আইএমএফ’র তহবিল থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার আলোচনাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। তাছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকার বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে।

আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যেকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। দায় পরিশোধের মতো রিজার্ভ না থাকায় গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে শ্রীলঙ্কা।

এদিকে রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০৫ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। খোলাবাজারে ডলারের দর ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনও ১১২ থেকে ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭৬৫ কোটি (৭ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ছয় মাসে রিজার্ভ থেকে এত ডলার কখনোই বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে কমছে রিজার্ভ।

আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে মোট ৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এ হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি বিল মেটানো সম্ভব।

https://dailysangram.com/post/513287