৯ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১২:৪৭

হাড় কাঁপানো শীতে দুর্ভোগে ছিন্নমূল মানুষ

দেশে কয়েকদিন ধরে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতে কাবু রাজধানী ঢাকার জনজীবন। তীব্র ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘনকুয়াশার কারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বেলা গড়িয়ে দুপুর হলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে ফেরি, লঞ্চ চলাচল। বিঘ্ন ঘটছে বিমান চলাচলে। গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী। বইছে উত্তরের শীতল হাওয়া। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন্ন ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

গতকাল দুপুর ১টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয় ঢাকার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সঙ্গে উত্তর অথবা উত্তর-দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। এ ছাড়া আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

গতকাল ঢাকায় দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল ঢাকা, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বেশ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে রয়েছে। তার মধ্যে যশোরের তাপমাত্রা ৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মাদারীপুরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুষ্টিয়ায় ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঈশ্বরদীতে ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফরিদপুরে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নওগাঁয় ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পঞ্চগড়ে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বরিশালে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নীলফামারীতে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সাতক্ষীরায় ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিশোরগঞ্জে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিরাজগঞ্জে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বগুড়ায় ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজকেও আবহাওয়া পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। ওদিকে শীতে তীব্র দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ছিন্নমূল মানুষ।

রাজধানীর কাওরান বাজার, তেজগাঁও রেলস্টেশন, বিজয় সরণি, কমলাপুর রেলস্টেশন, শাহবাগ, টিএসসি, গুলিস্তান, মগবাজার, গাবতলী, হাইকোর্ট চত্বর, ফকিরাপুল, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে কুঁজো হয়ে বসে ছিলেন আফসার আলী। তার পরনে ছেঁড়া একটি সুয়েটার। প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে যা পান তা দিয়ে দিন চলে। আফসার বলেন, সারাদিন বোতল কুড়াইয়ে পেট চালাই। শীতের জন্য ১২টার পরেও এখনো বসে আছি। আগে বোতল কুড়িয়ে যে টাকা পেতাম, তা দিয়ে কোনোভাবে পেট চলতো। এখন যা পাচ্ছি তা দিয়ে পেট চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। খোলা আকাশের নিচে শীতের সঙ্গে লড়াই করে বাস করছেন রহিমা। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পাশেই একটি রাস্তায় বাস করেন তিনি। এক টুকরো পলিথিন ইট দিয়ে আটকে ময়লা নোংরা চাদরে শিশুকে জড়িয়ে পাশেই কাগজ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছেন। অনেক বছর ধরেই এখানেই তার সংসার।

স্বামী পান-সিগারেট বিক্রি করেন। এতে সংসার কোনরকমে চলে গেলেও শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় কেনা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ৩ বছর আগে একটি সংগঠন থেকে শীতের কাপড় দিয়েছিল তা এখনো ব্যবহার করছি। জায়গায় জায়গায় ছিঁড়ে ফুটো হয়ে গেছে। এই শীতের মধ্যে আমরা অনেক কষ্ট করছি। এখনো কোনো কিছু পাই নাই। এভাবেই শীত কাটাচ্ছি। অনেক জায়গায় কম্বল দেয়া হয়, কিন্তু একটাও পাই না। শীতের কোনো কাপড়-চোপড় নেই। কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে ছেঁড়া কাঁথা আর ময়লা চাদর গায়ে দিয়েই শুয়ে আছে সারি সারি মানুষ। গলা অবধি চাদর টানা। এখানেও শীত নিবারণের জন্য আগুন জ্বালানো হয়েছে। তাদেরই একজন নজরুল। বাড়ি কুড়িগ্রামে। তিনি বলেন, রাতে কাজ করে সকালে ঘুমান। কম্বল কিংবা শীত নিবারণের কোনো উপকরণ নেই তার। তাই কষ্টও হয় ভীষণ। সেখানকার বাসিন্দা তসলিমা বেগম। শীত নিবারণে তার তেমন প্রস্তুতি নেই। পলিথিনের তৈরি ছোট্ট ঘরে শুয়ে আছে ছেলে-মেয়ে নিয়ে। মাঝেমধ্যে তারা আবর্জনা পোড়া দিয়ে নিজেদের শীত প্রতিরোধ করেন।

https://mzamin.com/news.php?news=37553