৯ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১২:২৮

কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে দাম বাড়ছে উচ্চশিক্ষার বইয়ের

কাগজের মূল্য বৃদ্ধিতে এবার দাম বাড়ছে সব ধরনের বইয়ের। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণী ও কোর্সের বইয়ের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। ইতোমধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের বইয়ের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যদিও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আগে থেকেই ক্ষোভ বিরাজ করছে। এরপরে নতুন করে এখন পাঠ্যপুস্তকের দাম বাড়ার ঘোষণায় অনেকেই সন্তানের শিক্ষাব্যয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশের সব বইয়ের দাম বাড়ছে। বই ও মান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাম ১৫ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকের এনসিটিবি অনুমোদিত বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি ও বাংলা সহপাঠ বইয়ের পণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির পর থেকে প্রেসগুলো এসব বই ছাপার কাজ শুরু করবে। সর্বশেষ তথ্য মতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে একাদশের ক্লাস শুরু হবে।

অন্য দিকে পাঠ্যবই ছাড়াও বিভিন্ন কোর্স ও পেশাভিত্তিক অন্যান্য বইয়ের দামও ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। বইয়ের বাজার বলে খ্যাত নীলক্ষেতসহ অন্যান্য এলাকাতেও উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সের বই বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন নোট, প্রশিক্ষণ কোর্স, চাকরির বই, গল্পের বইয়ের দামও বেড়ে গেছে। এর আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ ও কলম খাতার দামও বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, এ বছর বিশ্বব্যাপীই কাগজের দাম বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশেও কাগজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে একাদশের বইয়ের দাম কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকাশকরা কাগজের দামের সাথে সমন্বয় করে বইয়ের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানো দাবি জানালেও সেটি আমলে নেয়া হয়নি। বাজারপরিস্থিতি বিবেচনা করে এসব বইয়ের দাম বাড়ানো হবে। অভিভাবকদের ওপর যাতে চাপ সৃষ্টি না হয় সেটি বিবেচনা করে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এনসিটিবির সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের একাদশের বইয়ের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। তবে প্রকাশকরা ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে। এজন্য তাদের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতা কমিশনের বাজার বিবেচনা করে দাম বাড়ানো জন্য দাবি জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: ফরহাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, উচ্চমাধ্যমিকের বই তৈরিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে দরপত্র চূড়ান্ত করা হবে। এ বছর বইয়ে তেমন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। এনসিটিবি উচ্চ মাধ্যমিকের চারটি বইয়ের দাম ও পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করে দেবে। বাকিগুলো বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে ছাপানো হবে। এসব বই কেউ কেউ নকল করার চেষ্টা করে থাকে। সেটি বন্ধে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করছি।

এ দিকে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সহসভাপতি শ্যামল পাল জানান, এ বছর সারাবিশ্বেই কাগজের দাম নিয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর এ কারণে বইয়ের দাম কিছুটা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আর সেটি বিবেচনায় নিয়েই এনসিটিবিকে একাদশের বইয়ের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, এনসিটিবি থেকে দেয়া একাদশের বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি ও বাংলা সহায়ক বইয়ের দাম আমরা চাইলেও বাড়াতে পারি না। এনসিটিবি যে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে, সেটিই আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের অন্যান্য বইয়ের দাম ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পুস্তক প্রকাশকরা জানান, এবার নতুন বছরে ইংরেজি বইয়ে ছয়টি অধ্যায়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বইয়ের দাম আগের মতো রাখা হয়েছে। কেউ যাতে নকল বই ছাপাতে না পারে, সেজন্য আমাদের একটি মনিটরিং টিম মাঠে কাজ করবে। বইয়ের মান আগের চেয়ে আরো ভালো করা হচ্ছে। ২ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী এসব বইয়ের মোড়ক উন্মচন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অন্য দিকে এবার এনসিটিবি উচ্চ মাধ্যমিকের চারটি বিষয়ের মোট ৪৫ লাখ বই ছাপানোর অনুমোদন দেবে। সে হিসাবে প্রতিটি বই ১০ লাখের কিছুটা বেশি ছাপানো হবে। এ বাবদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আয় হবে প্রতিষ্ঠানটির। এ অর্থ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেয়া হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/719037