৮ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ৯:৩৫

লালমনিরহাটের তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর

কৃষিক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব

উত্তরাঞ্চলের এককালের খরস্রোতা নদী তিস্তা এখন মৃত্যুপ্রায় এবং তিস্তা এখন ধু-ধু বালু চর। খননের উদ্যোগ নেই। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে তিস্তার তীরবর্তী মানুষদের ওপর। প্রতি বছর নদীর পানি শুকিয়ে যে হারে চর জেগেছে তাতে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলে কয়েক ধাপ পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত খননের অভাবে নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে অসংখ্যা ধু-ধু বালুচর। শুকনো মৌসুমে নদীর কোথাও কোথাও একেবারে পানি থাকে না। বিশেষ করে বালুচরের সৃষ্টি হওয়ায় লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং পানির অভাবে মৌসুমের আবাদকৃত ফসলের উৎপাদন ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। অপরদিকে পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর ‘দু’ কূল উপচে পড়ায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরবাড়ি পানি বন্দী হয়ে পড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এভাবে সংস্কারবিহীন তিস্তা নদীর বিপর্যযের কারণে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের এ অঞ্চলে অধিক ফসল উৎপাদনের আশা শেষ পর্যন্ত আশাই থেকে যাচ্ছে। তিস্তার তলদেশে জমেছে পলি। শুষ্ক মৌসুম আস্তে- না আস্তাতেই নদীটির বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এতে নীলফামারীর ডালিয়া থেকে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার নৌচলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে তিস্তা নদীর বুকে মাইলের পর মাইল বালুচর জেগে উঠেছে। কোথাও একেবারে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে নদী। খরস্রোতা তিস্তা এখন পরিণত হয়েছে মরা তিস্তায়। বিশেষ করে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের তিস্তা সড়ক সেতুর নীচে একফোটা পানিও নেই। এই বছর চাষিরা সেতুর নীচে গম, ভুট্টা, তামাকসহ রবি ফসলের আবাদ করেছে। মৌসুমের শুরুতে নদীর পানি কমে গেলে শত শত সেচ যন্ত্র অচল হয়ে পড়ে। এতে ব্যহত হয় চাষাবাদ। বর্তমানে তিস্তা নদী লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে খরা, বন্যায় সৃষ্টির মাধ্যমে। বন্যায় সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরপরই তিস্তার বিভিন্ন স্থানে বিধৌথ অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার জেলে পরিবার নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত কিন্ত নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব পরিবারের অধিকাংশই এখন হটাৎ করে পেশা পরিবর্তন করে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সামগ্রিকভাবে সরেজমিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উত্তরাঞ্চলের এক সময়ের খরস্রোতা এ তিস্তা নদীর সংস্কার প্রয়োজন। বছর বছর পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি সহ বর্তমানে সৃষ্ট নৌচলাচল সংকট থাকবে না। প্রতি বছর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে ব্যাপক এলাকা। ভুক্তভোগী মহলের মতে উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে ৪ জেলার ২৫ লাখ জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থে তিস্তা নদী খনন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

https://dailysangram.com/post/513061