৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৮:৪৫

এখনো সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে কাঁদেন মা

আজ ৭ই জানুয়ারি। ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় বিএসএফ কাঁটাতার পেরুতে গিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে বহুল আলোচিত ফেলানী খাতুনকে। তার হত্যার একযুগ পেরিয়ে গেলেও সন্তান হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার। প্রিয় সন্তান হত্যার বিচারের আশায় এখনো কাঁদে তার পরিবার। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের শ্রমিক নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। সেখানেই তিনি একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। এরমধ্যে বাংলাদেশে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের। সেই উদ্দেশ্যে বাবা নুরুল ইসলাম বড় মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে রওনা দেয়। ২০১১ সালের এই দিনে কুয়াশা ঢাকা ভোর ৬টার দিকে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পার হচ্ছিল ফেলানী ও বাবা নুরুল ইসলাম। মইয়ের সামনে ছিল বাবা নুরুল ইসলাম।

তার পিছনে ফেলানী। এ সময় বিএসএফ টের পেয়ে গুলি ছুড়লে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলানীর বাবা নেমে পড়ায় বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে পড়ে কিশোরী ফেলানী। গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করে পানি পানি বলে চিৎকার করতে করতে নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ফেলানী। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার মৃতদেহ।

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত, সেই চাপের মুখে পড়ে ২০১৩ সালের ১৩ই আগস্ট ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের এ কোর্টে সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ই সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনঃবিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর পুর্নঃবিচার শুরু হলে, ১৭ই নভেম্বর আবারো বিএসএফের আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২রা জুলাই ওই আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ই জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ই অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৮ই মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি। ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম জানান, আমাদের নিরস্ত্র সন্তানকে নির্মমভাবে কাঁটাতারে হত্যা করা হয়েছে। তাকে একটু পানিও খেতে দেয়া হয়নি। আমরা বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু একযুগ পেরিয়ে গেলেও আমরা না পেলাম ক্ষতিপূরণ, না পেলাম ন্যায় বিচার। কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন জানান, করোনার কারণে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার ঝুলে থাকায় দু’রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব সম্পর্ক অটুট রাখতে দ্রুত ভারতের উচ্চ আদালত বিচারটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই আইনজীবী।


https://mzamin.com/news.php?news=37265