৩ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:০১

৮ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় রেকর্ড ৯৯৫১ জনের মৃত্যু

২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় গত আট বছরের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মোট ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৯৫১ জনের। আহত হয়েছেন আরও ১২ হাজার ৩৫৬ জন। ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সেফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এলায়েন্সের চেয়্যারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ থেকে নিহত ও আহতের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সমিতির বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আদালতের আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলকে দুর্ঘটনা বাড়ার একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ সময়ের মধ্যে রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত এবং ৩৫৭ জন আহত হয়েছে। নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ৭৪৩ জনের কোনো সন্ধান এখনও মেলেনি। সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৭ হাজার ৬১৭টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে সড়কে যারা দুর্ঘটনায় পড়েছেন, তাদের ৩ হাজার ৯০ জন চালক, এক হাজার ৫০৩ জন পথচারী, ৭৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১৩২ জন শিক্ষক, ২৮৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এক হাজার ১৫০ জন নারী, ৭৯৪ জন শিশু, ৪৪ জন সাংবাদিক, ৩১ জন চিকিৎসক, ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা, ৫ জন শিল্পী, ৯ জন আইনজীবী ও ২৯ জন প্রকৌশলী এবং ১৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। ৯ হাজার ৬১৬টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাস, ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৬ দশমিক ২২ শতাংশ অটোরিকশা, ২৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা ও লেগুনা দুর্ঘটনায় পড়েছে। এসব দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২ দশমিক ২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ফিডার রোডে ঘটেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ বলছে, বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাথ না থাকা বা ফুটপাথ বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। সংবাদ সম্মেলন থেকে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে- সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা; আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কারপূর্বক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও বিধিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা; সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন করা; সড়ক নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া; দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা।

https://mzamin.com/news.php?news=36688