২ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১১:১৪

প্রাণীর হিসাবে বড় গরমিল

দেশে মোরগ-মুরগি ও গরু-ছাগলের সংখ্যায় দুই সরকারি সংস্থার হিসাবে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা গেছে। দুই সংস্থার একটি হলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস), অন্যটি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ডিএলএসের তুলনায় বিবিএসের হিসাবে মোরগ-মুরগি, মহিষ ও ছাগলের সংখ্যা কম। তবে হাঁস ও গরুর সংখ্যা বেশি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিবিএসের জরিপের তথ্য একটি বছর (২০১৯) ধরে করা হয়। আর ডিএলএসের তথ্য অর্থবছরের হিসাব ধরে করা হয়। এ ছাড়া বিবিএসের জরিপে শুধু কৃষকের খানা পর্যায়ে উৎপাদিত তথ্য হিসাবে নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক খামারের তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

বিবিএস সম্প্রতি কৃষি জরিপ ২০১৯-এর তথ্য প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে প্রতিবছরই প্রাণিসম্পদ অর্থনীতি নামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে ডিএলএস। এ জন্য দুটি সংস্থার তথ্য পর্যালোচনায় অর্থবছর (২০১৯-২০) ও এক বছরের (২০১৯) তথ্যকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বিবিএসের জরিপে দেশে ২০১৯ সালে মোরগ-মুরগি ছিল ১৯ কোটি ৯৪ লাখ তিন হাজার। আর ডিএলএসের হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২৯ কোটি ৬৬ লাখ দুই হাজার। বিবিএসের হিসাবে মোরগ-মুরগি কম। বিবিএসের প্রতিবেদনে মহিষ ছিল ছয় লাখ ৩৬ হাজার ৯২৬। আর ডিএলএসের প্রতিবেদনে তা ছিল ১৪ লাখ ৯৩ হাজার। অন্যদিকে বিবিএসের ছাগল ছিল এক কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার, যেখানে ডিএলএসের প্রতিবেদনে ছিল দুই কোটি ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার।

সরকারের দুটি সংস্থার মধ্যেই দেশের পশুপাখি উৎপাদনের তথ্যে বড় ধরনের গরমিল দেখা দিয়েছে, এ বিষয়ে বিবিএসের কৃষি শুমারি ২০১৯ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয়। সেখানে কৃষিশুমারির প্রকল্প পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, কৃষিশুমারিতে শুধু কৃষকের খানা পর্যায়ে উৎপাদিত তথ্য হিসাবে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক খামারের তথ্য বিবেচনায় আনা হয়নি। ফলে মোরগ-মুরগির তথ্য তুলনামূলকভাবে কম আসবে। কেননা দেশে এখন বাণিজ্যিক খামারে উৎপাদন বেড়েছে।

তাদের এই যৌক্তিকতা নিয়েই প্রকাশনা অনুষ্ঠানেই প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, কৃষকের খামারের মুরগি হিসাবে নিলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুরগিকেও হিসাবে নিতে হবে। মুরগি মানে তো দেশের অভ্যন্তরে থাকা সব ধরনের মুরগিকেই বোঝাবে। বিবিএস কেন বাণিজ্যিক খামার বাদ দিয়ে শুধু পরিবারভিত্তিক মোরগ-মুরগির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের পরিকল্পনা ও কাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গতানুগতিক কাজ করতে আমরা অভ্যস্ত। এই ধারা আমাদের ভাঙতে হবে। পশুপাখির তথ্য নিয়ে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে বিবিএসের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এটি শিগগিরই দূর করা প্রয়োজন। ’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এসআইডি) প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সার্বিক বিষয়ে এসআইডির সাবেক সচিব রীতি ইব্রাহীম কালের কণ্ঠকে বলেন, অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো তথ্যের আন্ডার কাভারেজ হয়ে থাকে তবে সেটি সমাধানের উপায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুটি সংস্থা বসে এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। কোনো জরিপের অবকাঠামোগত কিংবা পরিকল্পনাগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেটিও দূর করতে হবে। তথ্য প্রকাশে আইনগতভাবে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবিএসের প্রতি মানুষের এখন আগ্রহ বেশি। তাই জরিপের তথ্য নিয়ে কোনো বিতর্ক রাখাটা সমীচীন হবে না।
ডিএলএসের চেয়ে বিবিএসের জরিপে বেশ কিছু পশুপাখির সংখ্যা বেশি রয়েছে। বিবিএসের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে হাঁস ছিল সাত কোটি ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার, যা ডিএলএসের হিসাবে পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ ১৬ হাজার। একইভাবে বিবিএসের প্রতিবেদনে গরু ছিল দুই কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার, যেখানে ডিএলএসের প্রতিবেদনে দুই কোটি ৪৩ লাখ ৯১ হাজার এসেছে।

বিবিএস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইনগতভাবে জাতীয় তথ্য প্রকাশের দায়িত্ব শুধু বিবিএসের। অন্যরা শুধু নিজস্ব ব্যবহার কিংবা দাপ্তরিক কাজের জন্য তথ্য দিতে পারবে। সে হিসেবে দিন শেষে বিবিএসের তথ্যই জাতীয়ভাবে নিতে হবে। এটির কোনো বিকল্প নেই। তবে ডিএলএসের উচিত যে তথ্য তারা সরবরাহ করছে, সেটি বিবিএসকে দেখিয়ে নেওয়া। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সেটি করছে না। তাদের উচিত তথ্য প্রচারের আগে বিবিএসকে জানানো। তখন তথ্যগত বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সঙ্গে গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছি। কৃষি জরিপ ২০১৯ প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়টি আমি জেনেছি। তবে কী ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে মন্তব্য করতে হবে। কোনো পার্থক্য তৈরি হলে অবশ্যই সমাধান করা হবে। ’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/01/02/1218462