১ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১১:২১

মিল মালিকদের অতিমুনাফায় চালের দাম কমছে না

২০২২ সালে প্রায় ৪২ লাখ টন বাড়তি চাল উৎপাদন হলেও চালকল মালিকদের অতিমুনাফার কারণে ভোক্তারা সুবিধা পাচ্ছে না। মালিকরা প্রতি কেজিতে আট থেকে ১৪ টাকা মুনাফা করছেন।
গতকাল শনিবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বিজ্ঞাপন

বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম এবং কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস।

গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চালের মোট উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৯৭ লাখ টন। আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন এক কোটি ৬৩ লাখ টন। এ ছাড়া বোরো উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি চার লাখ টন এবং আউশ ৩০ লাখ টন। মোট চাহিদা তিন কোটি ৫৫ লাখ টন। এতে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত। এর পরও চালের দাম কমছে না।

এ নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষকরা। চালকলের মালিক ও খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া কৃষকের উৎপাদন খরচও কিছুটা বেড়েছে। করপোরেট গ্রুপগুলো চালের বাজারে প্রবেশ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চালের ভালো উৎপাদনের পরও কেন দাম কমছে না, তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা করতে হবে। ব্রির গবেষণায় আমরা অনেক কারণ খুঁজে পেয়েছি। ব্রির পাশাপাশি বিআইডিএস, সিপিডিসহ অন্যান্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠানকেও এ বিষয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। ’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সবার জন্য পুষ্টিজাতীয় খাবারের নিশ্চয়তা দিতে কাজ করছে। বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফল উৎপাদনেও জমির ব্যবহার বাড়ছে। এ অবস্থায় সব সংস্থা, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

সামনের দিনগুলোতে চালের চাহিদা আরো বাড়বে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে কৃষিজমি কমছে। ভুট্টা, শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসলেও জমির ব্যবহার বাড়ছে। বাড়িতে যেসব ফসল হতো, যেমন—চালকুমড়া, সেটাও এখন মাঠে হচ্ছে। এসবের ফলে ধান চাষের জমি কমছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে চালের উৎপাদন বাড়াতে হলে গবেষণায় আরো জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে উদ্ভাবিত জাতের দ্রুত সম্প্রসারণ করতে হবে।

ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর জানান, আমনে বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত চালের কোনো সংকট হবে না, বরং ৪২ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকবে। ১৭ কোটি মানুষের চালের চাহিদার পাশাপাশি মানুষের বাইরের (নন-হিউম্যান) ভোগ ২৬ শতাংশকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০৫ গ্রাম করে চালের চাহিদা হিসাব করলে ১৭ কোটি মানুষের জন্য বছরে চালের প্রয়োজন দুই কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার টন। অন্যান্য ভোগে চালের প্রয়োজন এক কোটি তিন লাখ ৭০ হাজার টন। সেই হিসাবে মোট চাহিদা তিন কোটি ৫৫ লাখ টন।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/01/01/1218178