১০ জুন ২০২২, শুক্রবার, ১২:৫২

বাজেট কি বাস্তবায়ন হবে?

বাজেটের অঙ্ক যেন গতানুগতিক হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই বাজেটের আয়-ব্যয়ের একটি প্রবৃদ্ধি ধরে অঙ্ক ঠিক করা হয়। কিন্তু বছর শেষে এর বড় একটি অংশ অবাস্তবায়িত থেকে যায়। বাস্তবতার আলোকে সংশোধিত বাজেটে অঙ্কের পুনর্বিন্যাস করার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বছর শেষে রাজস্ব আয় যেমন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকে তেমনি উন্নয়ন-অন্ন্নুয়ন ব্যয়েরও বড় একটি অংশ অবাস্তবায়িত থেকে যায়।

এর প্রভাব পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ওপর পড়ে। ফলে অর্থবছরের শুরুতেই অসম্ভব এক লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। এবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় ১৮০ পৃষ্ঠায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ সম্পর্কে একটি সারণি দেয়া আছে। এতে দেখা যায়, চলমান অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা যা সারা বছর নির্ধারিত আয়ের লক্ষ্যমাত্রার সাড়ে ৬৯ শতাংশ। শেষ তিন মাসে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে লক্ষ্যমাত্রা অজর্নে শেষ তিন মাসে বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে ২৭.৩১ শতাংশ। এর মধ্যে এপ্রিল ২০২২ মাসে এনবিআর রাজস্ব আদায় বাড়াতে পেরেছে ২২.৭৯ শতাংশ। আর অর্থবছরের ১০ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৫.২৭ শতাংশ। অন্য দিকে কর ছাড়া প্রাপ্তি হয় ৯ মাসে ২৫ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা, যা বছরের এ খাতের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশের মতো। বাকি তিন মাসে ৪০ শতাংশ রাজস্ব বাড়াতে হবে এ খাতে। স্বাভাবিকভাবে এ আয় হওয়ার কথা নয়। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর সংরক্ষিত তহবিল থেকে অর্থ আয় দেখিয়ে বাজেটে স্থানান্তর করা হলে হয়তোবা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। যেটি এর আগে করোনার সময় করা হয়েছে।

অর্থবছরের ৯ মাসের ব্যয় খাতের চিত্রও একই রকম। এ সময়ে মোট বাজেট ব্যয় হয় দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেট বরাদ্দের মাত্র ৪৪.২৭ শতাংশ। এই সময়ে পরিচালন ব্যয় হয় মোট বরাদ্দের ৫৪.৫৫ শতাংশ আর উন্নয়ন ব্যয় হয় ২৮.৭৭ শতাংশ।

অর্থবছরের ৯ মাসে বাজেটের মাত্র ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত অতীতে একেবারেই বিরল। রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি ছাড়াও দেশী-বিদেশী খাতের ঘাটতি অর্থায়নের লভ্যতা এর একটি কারণ বলে ধারণা করা যায়। ৯ মাসে বৈদেশিক উৎস থেকে সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৭.৬৭ শতাংশ পাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ উৎসের নিট প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ২৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার বিপরীতে এ সময়ে ২২ হাজার ৭২ কোটি টাকা উল্টো ফেরত দেয়া হয়।

অর্থবছরের ৯ মাসে বাস্তব আয়-ব্যয়ের প্রতিফলন সংশোধিত বাজেটে নেই বললেই চলে। বাজেট বাস্তবায়নের এই দুরবস্থার মধ্যে সংশোধিত বাজেটে এবার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আর ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ১০ কোটি টাকার মতো কমানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো-শেষ তিন মাসে কি বাজেটের ৫৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব। আর সম্ভব হলেও সম্পদ ব্যয়ের গুণগত মান বজায় রাখা কি যাবে?

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৩ কোটি টাকার বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাস্তবে আয় হয় তিন লাখ ৩১ হাজার ১৩ কোটি টাকা। আর একই অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাস্তবে ব্যয় হয় ৪ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরগুলোতে সংশোধিত বাজেট আর বাস্তবায়নের মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই বাড়তে দেখা গেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/669359