৮ জুন ২০২২, বুধবার, ১১:২১

চার দিন ধরে বাড়ছে ডলারের দাম

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন অব্যাহত রয়েছে। গত চার কার্যদিবস পর্যন্ত টানা বাড়ছে ডলারের দাম। গতকাল মঙ্গলবারও আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডলার ১ টাকা বাড়িয়ে ৯২ টাকা থেকে ৯৩ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আর নগদ ডলার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো প্রতি ডলার কিনতে ব্যয় করেছে ৯৭ টাকা। গতকাল ব্যাংকগুলোর লেনদেনের এ তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করেছে।

এদিকে ডলারের সঙ্কট মেটাতে প্রতিদিনই ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে। গতকালও কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচটি ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলোর প্রতি ডলার কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ৯২ টাকা। এ সুবাদে চলতি অর্থবছরে গতকাল পর্যন্ত ৬৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকারদের সাথে বৈঠক করে অভিন্ন দর বেঁধে দেয়া হয়। তখন আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর বেঁধে দেয়া হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। কিন্তু এ দর বেঁধে দেয়ার তিন দিনের মাথায় অর্থ্যাৎ ২ জুন প্রতি ডলারে ২ টাকা ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ৯১ টাকা করা হয়। পরের কার্যদিবস রোববারে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। এভাবে পরের দিন সোমবারে ৫০ পয়সা এবং গতকাল মঙ্গলবার ১ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ টাকা নির্ধারণ করেছে ব্যাংকাররা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ডলারের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে এখন অসামঞ্জস্যতা কাটছে না। চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় প্রয়োজনীয় আমদানির দায় পরিশোধ করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংকের কাছে ছুটছে। আন্তঃব্যাংকেও প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে নগদ ডলার কিনছে। এতে প্রতি ডলারে ব্যয় হচ্ছে ৯৭ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন বেলা ১১টার মধ্যে ব্যাংকগুলোর আমদানিতে ডলারের মূল্য, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স হাউজগুলোর কাছ থেকে কী দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা হচ্ছে সেটি এবং ব্যাংকগুলোর কাছে কী পরিমাণ ডলার মজুদ রয়েছে (এনওপি) তার অবস্থান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জানাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিনই ব্যাংকগুলো তাদের দর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকগুলো যে হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি হারে ডলার লেনদেন করছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে তদারকি অব্যাহত রয়েছে।

একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ডলারের যে দর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অবহিত করা হচ্ছে, কর্পোরেট ডিলিংয়ের মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি হারে লেনদেন হচ্ছে। এর একটাই কারণ, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের সরবরাহ নেই। একদিকে চাহিদা বাড়ছে; কিন্তু কাক্সিক্ষত হারে ডলারের সরবরাহ বাড়ছে না। আর এ কারণেই প্রতিনিয়তই ডলারের দর বাড়াতে হচ্ছে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় বাড়বে, তবে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাবে। আর আমদানি ব্যয় বাড়লে রফতানি পণ্য উৎপাদনে যেমন ব্যয় বেড়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানিকারকরা পণ্যের মূল্যের প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে, পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারেও পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই সবধরনের পণ্যের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে, এর ওপর বিনিময় হার বৃদ্ধিজনিত কারণে পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাবে। অপরদিকে গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্তও সহসাই আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/668879