৭ জুন ২০২২, মঙ্গলবার, ১১:১৬

সার কারখানার গ্যাসের দাম ২৬০% বৃদ্ধি, শঙ্কায় কৃষি

প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গড়ে ২২.৭৮ শতাংশ বাড়ানো হলেও এবার সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ২৫৯.৫৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে সারের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। কৃষিতে বড় উপকরণ সার। ফলে সারে ভর্তুকি না বাড়ালে বাজারে সারের দাম বাড়বে।

এতে দেশের কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
সার কারখানাগুলো প্রতি ঘনমিটার গ্যাস চার টাকা ৪৫ পয়সা করে দিত, এখন বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষিপণ্যের দাম বাড়লে সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোগ্য পণ্যে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ ভোক্তার ঘাড়ে আরেক দফা পড়বে। এমনিতেই দেশের বাজারে চাল, আটা, সবজিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সব দেশই কৃষি উৎপাদনে জোর দিচ্ছে এবং এই খাতে ভর্তুকি বাড়াচ্ছে। এই সংকটকালে আমদানিনির্ভর না থেকে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার এমনিতেই সারে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। এখন গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে সারের উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে। তাই সরকারকে ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। সে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে যাতে কৃষকের কাছে সারের দাম আগের মতোই থাকে, কোনোভাবে যাতে দাম না বাড়ে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এমনিতেই কৃষকরা পণ্য উৎপাদন করে লাভ করতে পারছেন না। এখন যদি গ্যাস, সার ও বিদ্যুতের কারণে সেচের খরচ বাড়ে তাহলে কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। কৃষক ঘাটতিতে পড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করে যে চাহিদা মেটাব সেই সুযোগও নেই। কাজেই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে সারের ওপর ভর্তুকি বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বেড়েছে, এখন বিদ্যুতের দামও বাড়বে। এতে কৃষিতে সেচ খরচও বাড়বে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কৃষক ও ভোক্তা এমনিতেই ক্ষতির মুখে আছেন। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় যাতে না বাড়ে, সে জন্য দীর্ঘদিন ধরে সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসে ভর্তুকি দিয়ে আসা হয়েছিল। এখন নতুন করে সেই জায়গাটিতেই হাত দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, এখন বাড়বে সার এবং কিছুদিন পর বাড়বে বিদ্যুতের দাম। তখন সেচ খরচও বাড়বে। সব মিলিয়ে কৃষি খাত সবচেয়ে চাপের মধ্যে পড়বে।

জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সার উৎপাদন পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ার প্রভাবটি কৃষক পর্যায়ে সারের দামে পড়বে না। কৃষক পর্যায়ে সারের কোনো মূল্য বৃদ্ধি হবে না। বর্তমান সারের দামটিই অপরিবর্তিত থাকবে। কৃষিকাজে সার, সেচ, বীজে সরকার ভর্তুকি অব্যাহত রাখবে। ’

উল্লেখ্য, গত রবিবার গ্যাসের নতুন মূল্যহার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে আবাসিকে এক চুলায় ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকা করা হয়েছে। আর প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিটের খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়। তবে বাড়েনি যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম চার টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা ০২ পয়সা করা হয়েছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৬ টাকা। শিল্প-কারখানায় আগে গ্যাসের মূল্য ছিল প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা ৭০ পয়সা। এখন বৃহৎ শিল্পকে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পকে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র শিল্পকে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা করে দিতে হবে।

বাণিজ্যিক গ্রাহকদের (হোটেল, রেস্তোরাঁ) ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের দাম ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা। চলতি মাস থেকে এ দাম কার্যকর হবে। গ্রাহকদের দিতে হবে জুলাই মাস থেকে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2022/06/07/1153198