৭ জুন ২০২২, মঙ্গলবার, ১১:১১

বিস্ফোরক দাহ্য পদার্থের তালিকায় নেই হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড

দেশীয় শিল্পে ব্যবহারের পাশাপাশি প্রায় ১৫ বছর ধরে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। বাংলাদেশে স্বল্প ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড টেক্সটাইল মিলে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর উচ্চ ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার- অক্সাইড রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। রসায়নবিদরা বলছেন, এই পদার্থটি মারাত্মক দাহ্য। সরাসরি বিস্ফোরণ না ঘটালেও এটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে, এ রকম একটি ভয়ঙ্কর রাসায়নিক দ্রব্যের অনুমোদন নিয়ে। কারা নিয়ন্ত্রণ করছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের উৎপাদন, মজুত ও ব্যবহার। বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, তারা যেসব পদার্থ নিয়ে কাজ করে তার একটি তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নেই। ফলে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মজুতের বিষয়ে তাদের কোনো করণীয় ছিল না।

এ বিষয়ে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহা. নায়েব আলীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তালিকায় না থাকায় হাইড্রোজেন পার- অক্সাইডের বিষয়ে তিনি কথা বলতে পারবেন না। রাসায়নিক দ্রব্যটি তালিকায় থাকা উচিত ছিল কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি যারা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছেন তাদের চিন্তার বিষয়। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে যে হাইড্রোজেন পার- অক্সাইড মজুত ছিল তা রপ্তানির জন্য মজুত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের মজুত ও উৎপাদনের অনুমোদন নিয়ে কাজ করে সরকারের প্রায় ১০টি সংস্থা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, কাস্টমস, নৌ-সমরাস্ত্র পরিদর্শন সংস্থা, পরিবেশ অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বিস্ফোরক পরিদপ্তর এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু বিএম ডিপোতে রাসায়নিক মজুতের জন্য সরকারের কোনো সংস্থার অনুমোদন রয়েছে তা নিয়ে কেউ কথা বলেনি। ২০২১ সালে বিপজ্জনক প্রজ্ব্বলনীয় পদার্থের একটি তালিকা করেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এতে ৩৮টি অতিদাহ্য এবং ১৬টি দাহ্য পদার্থ স্থান পেয়েছে। কিন্তু তালিকায় রাখা হয়নি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। এর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের এএসএম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড প্লান্টে আগুন লেগে একজন নিহত হয়েছিলেন। ৫ ঘণ্টাব্যাপী ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েছিলেন ২১ শ্রমিক।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা-
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মো. শাহিনুর ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে অ্যাডভান্সড অক্সিডেশন নিয়ে কাজ করছেন। তার দেয়া তথ্যানুসারে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি অতিমাত্রায় অক্সিডাইজিং পদার্থ। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির উদ্দেশ্যে যে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উৎপাদন করা হয় তা হাইলি কনসেনট্রেটেড (৬০%)। এই মাত্রার কারণে রাসায়নিক দ্রব্যটি সাধারণত নিম্ন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং স্বল্প মেয়াদের জন্য এটি ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটি সংরক্ষণ করতে হয়। এই রাসায়নিক সূর্যালোক থেকে দূরে রাখতে হয়। কোনো দাহ্য পদার্থ যেমন, শুকনো কাঠ, কাগজ, কাপড় বা গাছের পাতার সংস্পর্শে এলে এটি জ্বলে উঠতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে হাইড্রোজেন পার- অক্সাইড রোদে রাখলে তা ডিকম্পোজ হয়ে বা ভেঙে পানি ও অক্সিজেন তৈরি করে। এ সময় ব্যাপক পরিমাণে তাপ উৎপন্ন হয়। এক কেজি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ডিকম্পোজের সময় প্রায় ২৮৮০ কিলোজুল তাপ উৎপন্ন করে। প্লাস্টিক জারে থাকলে এটি বাস্প উৎপন্ন করে এবং ভলিউম বাড়তে থাকে। এই কম্বাইন্ড এফেক্টের কারণে ওই জারে প্রেসার তৈরি হয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ সময় যদি কোনো দাহ্য পদার্থ বা আগুনের সংস্পর্শে আসে তবে তা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।

https://mzamin.com/news.php?news=6437