৭ জুন ২০২২, মঙ্গলবার, ১১:০৫

পড়ে আছে ৩০ হাজার কেজি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড

বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর

দ্রুত নিলামের চেষ্টা * সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর তারা নড়েচড়ে বসেছে

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য প্রাথমিকভাবে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের যে পদার্থকে দায়ী করা হচ্ছে, সেই রাসায়নিকের মজুত আছে চট্টগ্রাম বন্দরেও। খালাস না নেওয়া দুই কনটেইনারে ৩০ হাজার কেজি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে বন্দরের শেডে। এসব তরল রাসায়নিক নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর তারা নড়েচড়ে বসেছে। ঝুঁকি এড়াতে দ্রুতই রাসায়নিকগুলো নিলাম কিংবা অন্য কোনো উপায়ে বন্দর থেকে সরিয়ে নিতে কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

শুধু হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডই নয়, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানির পর বিভিন্ন সময় খালাস না নেওয়া আরও বেশ কিছু রাসায়নিক পড়ে রয়েছে, যা থেকে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। তবে বন্দরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থগুলো রাখা হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক আমদানি করা হয়। অনেক আমদানিকারক এসব পণ্য বন্দর থেকে ডেলিভারি না নিয়ে ফেলে রাখেন। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা পণ্য আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিলামে বিক্রি বা ধ্বংস করা হয়। এ কাজটি করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্রায় প্রতি মাসেই কাস্টমস ডেলিভারি না নেওয়া রাসায়নিক বিক্রি করে থাকে। এরপরও নিলামে ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকা, আইনগত জটিলতাসহ নানা কারণে কিছু রাসায়নিক থেকে যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরে এ মুহূর্তে কী পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক রয়েছে, তা জানাতে পারেনি বন্দর বা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার (নিলাম) আলী রেজা হায়দার যুগান্তরকে বলেন, বন্দরের পি শেডে ধ্বংসযোগ্য কয়েক কনটেইনার রাসায়নিক রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য শেডে আরও কয়েকটি কনটেইনার আছে, যেগুলো নিলামযোগ্য। ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক চিহ্নিত করতে বন্দর ও কাস্টমসের সমন্বয়ে একটি যৌথ টিম কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট পেলে প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘শিল্পকারখানার কাঁচামাল রাসায়নিক পদার্থ। তাই এ জাতীয় পণ্যের আমদানি-রপ্তানি হবেই। তবে দেখতে হবে আমরা এক্ষেত্রে কতটুকু সতর্কভাবে হ্যান্ডেল করতে পারছি। বন্দরের পক্ষ থেকে সঠিক ব্যবস্থাপনার কোনো অভাব নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি আমদানিকারক রাসায়নিক ডেলিভারি না নেয়, আমরা কাস্টমসকে জানাই। তারা নিলামে তোলে অথবা ব্যবহার অনুপযোগী হলে ধ্বংস করে ফেলে। প্রায় প্রতি মাসেই আমরা কাস্টমসকে চিঠি দিয়ে রাসায়নিকের পরিমাণ সম্পর্কে অবগত করি। তবে কি পরিমাণ রাসায়নিক বন্দরে রয়েছে, তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, ২৫ মে একটি কনটেইনারে থাকা ২০ হাজার ৪৭৫ কেজি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এরপরও দুটি কনটেইনার থেকে গেছে, যাতে ছোট আকারের ৬০৯টি ড্রামে ৩০ হাজার ৪৫০ কেজি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রয়েছে। ঢাকার একটি নিট কম্পোজিট মিল এগুলো আমদানি করার পর ডেলিভারি নেয়নি। শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বোঝাই কনটেইনার বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব রাসায়নিক দ্রুত বন্দর থেকে সরাতে কাস্টমসকে চিঠি দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাসায়নিকগুলো স্পট নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার (নিলাম) আলী রেজা হায়দার জানান, দ্রুত নিলাম শেষে দু-একদিনের মধ্যে বিডারকে পণ্যগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া আরও যেসব রাসায়নিক রয়েছে, তাও দ্রুত বিক্রি বা ধ্বংসের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য রাখার ১৪টি শেড রয়েছে। এর মধ্যে বিপজ্জনক পণ্য রাখা হয় মূলত ‘পি’ শেডে। প্রায় ৩০ হাজার ৩৭৫ বর্গফুট আয়তনের এ শেড থেকে পণ্য সরাসরি খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া বন্দরের কনটেইনার রাখার চত্বরগুলোতেও ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিপজ্জনক পণ্যবাহী কনটেইনার রাখা হয়। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরাইড, সালফেট, কস্টিক সোডা, ফার্মাসিউটিক্যালসের কাঁচামাল, রঙ তৈরির কাঁচামাল, টেক্সটাইল কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক ও অতি দাহ্য পদার্থ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। লেবাননের বৈরুত বন্দরে ২০২০ সালে বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ সরানোর উদ্যোগ নেয়। ওই সময় রাসায়নিক চিহ্নিত করতে গঠন করা হয় একটি কমিটি। ওই কমিটি বন্দরের পি শেডসহ বিভিন্ন শেডে থাকা প্রায় ১৫০ টন রাসায়নিক চিহ্নিত করে। এরপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সিলেটের লাফার্জ সিমেন্ট কারখানায় নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় পণ্যগুলো ধ্বংস করে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/559388