৬ জুন ২০২২, সোমবার, ১২:০৯

বিপুল দাহ্য, ছিল না অনুমতি

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড এবং বিস্ফোরণের নেপথ্যে ছিল রাসায়নিক দাহ্য ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করে এ রাসায়নিক যৌগকে সংরক্ষণ করা হয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। ফলে চট্টগ্রামের ইতিহাসে রচিত হয়েছে কালো অধ্যায়। অভিযোগ রয়েছে, রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ এ ডিপোতে সংরক্ষণের অনুমতিও ছিল না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সংরক্ষণের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা গাইডলাইন রয়েছে। যা অনুসরণ করা খুবই জরুরি। সার্বিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ শেষে মনে হচ্ছে বিএম ডিপোতে নিরাপত্তা গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়নি। তাই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মূলত দাহ্য পদার্থ। বাতাসের সংস্পর্শে এলেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে আগুনকে উজ্জীবিত করে।’ চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘কনটেইনার ডিপোটিতে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রয়েছে। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়েছে।’ বিএম কনটেইনার ডিপোর প্রধান প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের জিএম এবং মুখপাত্র শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ‘ডিপোতে দাহ্য পদার্থ রাখার অনুমতি রয়েছে কি না তা আমি নিশ্চিত নই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাতে পারব।’ সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন শীলতপুর এলাকার ৭০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে বিএম কনটেইনার ডিপো।

আমদানি-রপ্তানির জন্য বিভিন্ন ধরনের পণ্য কনটেইনার রাখা হয় এ ডিপোতে। পাশাপাশি এ ডিপোর ভিতর রয়েছে প্রায় ৫০০ মিটারের একটি টিনের শেড। যাতে রাখা হয়েছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের বিপুল মজুদ। হাটহাজারী উপজেলার ঠান্ডাছড়ির আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ডিপোতে রাখা হয় রপ্তানির জন্য। শনিবার রাতের বিস্ফোরণের পর ওই শেডের টিনের পুরো অংশই উড়ে গেছে। শেডের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আশপাশে। এ ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ছিল না মজুদের অনুমতি। এমনকি বিস্ফোরক অধিদফতরের তালিকায়ও নেই প্রতিষ্ঠানটির নাম। দাহ্য পদার্থ নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও রয়েছে ত্রুটি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মতে, ‘বিএম ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে ডিপোতে মজুদ থাকা বিপুল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। এটি মূলত একটি রাসায়নিক যৌগ। হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে উত্তপ্ত হলে তা তাপীয় বিয়োজনে বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। তাই বিএম ডিপোর আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ রাসায়নিকের কারণেই কিছুক্ষণ পর পর বিস্ফোরণের শব্দ হয়। ডিপো কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণের প্রাথমিক সূত্রপাত কেমিক্যাল কনটেইনার দাবি করলেও মূল কারণ হচ্ছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।

https://www.bd-pratidin.com/first-page/2022/06/06/776083