৬ জুন ২০২২, সোমবার, ১১:৫২

বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা

পরিবেশ দূষণে ক্ষতি বছরে ৪২ কোটি টাকা

বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা। ঢাকা শহরের বাতাস সবচেয়ে বেশি দূষিত। বায়ুমান ইনডেক্সে কিছু দিন পরপরই দেখা যাচ্ছে, ঢাকা শীর্ষ দূষিত নগরীর একটিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকার বাতাসে রয়েছে আদর্শ বায়ু মানের চেয়ে অনেক বেশি কার্বন মনোক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, বেনজিন, সালফার ও ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্টস। ফলে ঢাকা এখন বসবাসের অযোগ্য একটি নগরী। এভাবে বায়ুদূষণ চলতে থাকলে একদিন ঢাকা হবে কোটি কোটি রোগাক্রান্ত মানুষের নগরী।

বায়ুদূষণের জন্য দায়ী কলকারখানা, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযানের অনিয়ন্ত্রিত কালো ধোঁয়া। মোটরযান ও কলকারখানার বিষাক্ত গ্যাস। এ জন্য শুধু যে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, একই সাথে পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুসারে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছে ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ২.৭ শতাংশ। শুধু বায়ুদূষণে বছরে ক্ষতি হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন উৎস থেকে ঢাকার বায়ু তথা পরিবেশে মিশে যাচ্ছে মিথেন, ইথিলিন। মিথেন গ্যাস বাতাসে মিশে যাওয়ায় ঢাকা হয়ে উঠছে উষ্ণতম নগরীর একটি। স্যাটেলাইটের ছবি থেকেও এটি লক্ষ করা গেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে ধুলাবালু, সিগারেটের ধোঁয়া ও কীটনাশকের সূক্ষ্ম কণা। ফলে মানবদেহে ক্যান্সার, অ্যাজমাসহ নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, ঢাকা শহরের ৬ লাখ মানুষ সিসা দূষণের শিকার। অন্য দিকে ঢাকার ৫৯টি এলাকার মাটি ও পানিতে সিসার পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি। রাজধানী ঢাকার পরিবেশ দূষণের জন্য ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো অবদানও রয়েছে। ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো ঢাকার ৩৪ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী এবং ত্রুটিপূর্ণ মোটরচালিত যানবাহন দায়ী ১৮ শতাংশ।

পরিবেশবিদ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার প্রধান ড. আবদুল মতিন বলেন, বাংলাদেশে সব ব্যাপারে খুবই সুন্দর সুন্দর আইন ও নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এসব আইন ততক্ষণ পর্যন্ত মানা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত আইনটি নিজের পক্ষে থাকে। প্রভাবশালীরা আইন মানেন না এমন অভিযোগ তো পুরনো। বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় যে আইন আছে তাতে বলা আছে নীতিমালা ভঙ্গ করলে শাস্তিরযোগ্য হলে শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু পরিবেশ আইন ভঙ্গকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না।

পরীক্ষায় ঢাকায় পানি ও বায়ু দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা, একই সাথে গরিব মানুষ। ঢাকার ৫৯ এলাকায় তীব্র মাত্রার সিসা পাওয়া গেছে। একই সাথে পাওয়া গেছে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, পিএম ২.৫ এর সমান অথবা এর চেয়ে ক্ষুদ্র বস্তুকণা, কীটনাশক, সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো খুবই ক্ষতিকর পদার্থ। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. হাসানুল করিম বলেন, ঢাকার দরিদ্র পরিবারের শিশু ও অন্য সদস্যরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ বা বায়ুদূষণে। এরা যে বায়ুদূষণের শিকার লেখাপড়া কম জানার কারণে ও দারিদ্র্যের কারণে তারা তা বুঝতেই পারেন না। শুধু অসুস্থ হয়ে গেলে এবং তা তীব্র হয়ে গেলে তারা চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা আসেন শেষ সময়ে। স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ের চিকিৎসায় তারা সুস্থ হতে পারেন না। ফলে অসুস্থতা নিয়েই জীবন পার করে দিতে হয়। ঢাকা শহরে দেখা যায়, দরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুলে না গিয়ে পিতামাতাকে সহায়তা করার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে যায়। কুড়ানির কাজ করতে গিয়ে দূষিত পানিতে নামতে হয় এবং এরপর পরিপূর্ণভাবে গোসল করা সুযোগ থাকে না। তা থেকেও শিশুরা অসুস্থ হয়ে থাকে। একই সাথে ঢাকার নারীরাও পরিবেশ দূষণের শিকার। অতিরিক্ত বায়ুদূষণে ঢাকায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং তা থেকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/668331