৪ জুন ২০২২, শনিবার, ১১:০৪

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতেই টাকার অবমূল্যায়ন

বিদ্যমান ডলার সংকট মোকাবিলায় রপ্তানি বিল নগদায়ন ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই দুই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানোর জন্য ডলারের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। কমানো হয়েছে টাকার মান। এদিকে রপ্তানিকারক ও বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মধ্যে ডলারের দাম বাড়ার প্রত্যাশা কমিয়ে আনতে ২ বা ৩ দিন কার্যকর থাকবে এমন বিনিময় হারও নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এতে ডলারের দাম বাড়ার প্রত্যাশা কমবে এবং ধীরে ধীরে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে। এদিকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রপ্তানি বিল একদিনের মধ্যে নগদায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিকারক, এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংক যাতে ডলারের প্রবাহ আটকে রাখতে না পারে সেজন্য তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ডলারের একক দর বেঁধে দেওয়ার পর এর দাম কমে আসে। কিন্তু রপ্তানিকারক, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ ও কয়েকটি ব্যাংক ডলারের প্রবাহ আটকে রাখে। এতে বাজারে ডলারের সরবরাহ কমে যায়। রপ্তানিকারকরা রপ্তানি বিল নগদায়ন না করে তা ব্যাংকে আটকে রাখে। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ ব্যাক টু ব্যাক এলসির জন্য সংরক্ষণ করে। বাকি অর্থ থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও অন্যান্য কাজে ব্যয় করে। সংরক্ষণ করা ডলারের দাম বেশি পেতে বিভিন্ন ব্যাংকে দরকষাকষি করে। এতে রপ্তানি বিল আটকে গিয়ে ডলারের সংকট প্রকট হয়। একইভাবে রেমিট্যান্স সংগ্রহের দায়িত্বে নিয়োজিত এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ডলারের দাম বাড়বে এই প্রত্যাশায় রেমিট্যান্সের ডলার আটকে রাখে। যা ডলার সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের একক দর প্রত্যাহার করে নেয়।

বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আমদানির জন্য ডলার ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা হলেও রপ্তানি বিল ও রেমিট্যান্সের দাম বিভিন্ন ব্যাংকে ভিন্ন ভিন্ন দরে রয়েছে। রপ্তানি বিল ৮৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তবে এক ব্যাংকের রপ্তানি বিল অন্য ব্যাংকে বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেমিট্যান্সের ডলার ৯১ থেকে ৯৪ টাকা দরে কিনছে ব্যাংকগুলো। চড়া দামে কেনা ডলার আমদানির জন্য বিক্রির সময় ৯১ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আপাতত। এতে চড়া দামে যেসব ব্যাংক ডলার কিনছে তাদের লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও তারা চড়া দামে কিনছে আগের কিছু এলসির দেনা শোধ করতে। নির্ধারিত সীমার মধ্যে ওইসব দেনা শোধ করতে না পারলে আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নামের অংশীদার হবে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বেসরকারি খাতের বিলাসী পণ্য আমদানির দেনা শোধে ডলার দিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে কয়েকটি ব্যাংক চড়া দামে ডলার কিনছে। রপ্তানি বিল গ্রাহকের ব্যাংকে জমা হলে তা একদিনের মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় ছাড়া বাকি ডলার গ্রাহকের হিসাবে টাকা রূপান্তরে আলোচ্য বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে জোগান দেওয়ার কথা। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। রপ্তানিকারকরা সময়ক্ষেপণ করতে নিজ ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি বিল দেশে না এনে তৃতীয় কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আনছে। এতে তৃতীয় ব্যাংকটি কমিশন বাবদ একটি অংশ কেটে নিচ্ছে। কিন্তু বিলটি গ্রাহকের ব্যাংকে আসতে ১০-১২ দিন বা এক মাসও সময় লাগছে। এর মধ্যে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

ফলে রপ্তানিকারকরা বাড়তি দামে বিল বিক্রি করছে। এ কারণে রপ্তানি বিল নগদায়নের গতি কমে গেছে। সূত্র জানায়, ডলারের দাম আরও বাড়বে এমন প্রত্যাশা কমানোর জন্য ২-৩ দিন মেয়াদি বিনিময় হার ঘোষণা করছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ ঘোষিত হার ৩ দিন বহাল থাকবে। অর্থাৎ ওই তিন দিনই একই হারে ডলার বেচাকেনা হবে। এতে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর ও রপ্তানিকারকদের দিন পার হলেই বাড়বে ডলারের দাম এমন প্রত্যাশা কমে আসবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/558249