৪ জুন ২০২২, শনিবার, ১০:৫৭

চাল ডাল আটা ময়দা রসুন ও দুধসহ সবকিছুর দাম বাড়ছেই

কঠিন হচ্ছে জীবনযাত্রা

মিয়া হোসেন: চাল, ডাল, আটা, ময়দা, রসুন ও দুধসহ প্রায় সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় কঠিন হয়ে পড়ছে মানুষের জীবনযাত্রা। এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা। ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা, খোলা আটার দাম বৃদ্ধি হয়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি, আমদানী করা রসুনের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, আর সয়াবিন তেলের দাম তো আগে থেকেই বেড়ে আছে। সবমিলিয়ে মানুষের জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অবিলম্বে জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য দাবি জানিয়েছে ভোক্তারা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে চালের কেজিতে দাম বেড়েছে ৮ টাকা পর্যন্ত। আর সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা। কিছু দিন আগেও যে চাল (চিকন) ৭০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। তবে বাজারে ৫০ টাকার নিচে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৫ টাকা কেজি। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে এই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৭ শতাংশের বেশি।

চালের পাশাপাশি আটা-ময়দা, মসুর ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ, খাসির গোশত ও মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে দেশি হলুদের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে হলুদ ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এই সপ্তাহে সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গত সপ্তাহে যে হলুদ ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এই সপ্তাহে সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে হলুদের দাম বেড়েছে কেজিতে ১১ শতাংশ।

এদিকে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে আমদানি করা শুকনো মরিচের দাম। যে শুকনো মরিচ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি দরে, এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ কেজি দরে। তবে ভালো শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আটা-ময়দার দাম বেড়েই চলেছে। এই সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে খোলা আটা ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ এই সপ্তাহের খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা।

তবে টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে খোলা আটার দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ শতাংশ। এছাড়া প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে কেজিতে চার টাকা। গত সপ্তাহে যে আটা ৫৯ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেত, এই সপ্তাহে সেই আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজি দরে। একইভাবে গত সপ্তাহে যে ময়দার দাম ছিল ৬২ টাকা কেজি, সেই ময়দা আজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি।

সব ধরনের মসুর ডালের কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে ছোট দানার মসুর ডাল ১৩০ টাকায় পাওয়া গেলেও গতকাল ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে দফায় দফায় বাড়ছে রসুনের দাম। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমদানি করা এক কেজি রসুন কিনতে এখন ক্রেতাদের দুইশ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ সপ্তাহ ধরে টানা বাড়ছে রসুনের দাম। নতুন করে এই সপ্তাহে আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।

গতকাল ব্যবসায়ীরা আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি করছেন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, যা তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। আর দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহে আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকার মতো। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, এই সপ্তাহের সেই পেঁয়াজ তারা বিক্রি করছেন ৫৫ টাকা দরে।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। সবজি বাজারে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক কেজি গাজর বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। গাজরের পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পাকা টমেটোর দাম। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কমে এখন ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এদিকে কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁচ কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা। বেশিরভাগ গোশতের দোকানে গরুর গোশতের কেজি ৭০০ টাকা বিক্রি করছেন। আর খাসির গোশত বিক্রি করছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।

ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেশ কিছু দিন ধরেই বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে প্রতি হালির দাম ৪২ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। নতুন করে ডিমের হালিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে ডিমের দাম ছিল ৩৮ টাকা হালি, এখন সেই ডিমের দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, বাজারে রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা। তবে ইলিশ মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৭০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা। ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

চালের বাজারে অভিযান রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানকালে পালিয়ে যাওয়া চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে সংস্থাটির উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেছেন, যারা পালিয়ে গেছে তারা বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, কেউ আইনের বাইরে না। আজকে পালিয়ে গেলেও কাল পালিয়ে থাকতে পারবে না। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে তারা পালিয়ে যেতে পারবে না। অভিযান আজই শেষ নয়, অভিযান নিয়মিত চলবে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে কৃষি মার্কেটের চালের আড়তে অভিযান শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান। অভিযানে চারটি প্রতিষ্ঠানকে মোট এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদের মধ্যে আনোয়ার ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার, মদিনা রাইস এজেন্সিকে ৫০ হাজার, সততা ট্রেডারসকে ৫০ হাজার ও সাইকা রাইস এজেন্সি নামের প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান শেষে বিকাশ চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অভিযানকালীন বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছি। ব্যবসায়ীরা মিল থেকে কি দরে চাল কিনে এনেছেন সেসব ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি। কিছু ব্যবসায়ী দেখিয়েছেন যে, তারা চাল কিনে এনেছেন দুই বস্তা। কিন্তু আমরা অভিযান পরিচালনা করে পেয়েছি ১০০ বস্তা। তিনি আরও বলেন, দোকানগুলোর মূল্য তালিকায় যে দাম দেওয়া রয়েছে, বিক্রয় রশিদের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। এসব অনিয়মের অভিযোগে চার ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানের শুরুতেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিক দোকান রেখে পালিয়ে গেছেন। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

https://dailysangram.com/post/491207