৩ জুন ২০২২, শুক্রবার, ১০:৪৭

মে মাসের পণ্য রপ্তানি

রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির গতি কমল

এপ্রিলে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫১ শতাংশ। মে মাসে সেটি কমে হয়েছে ২৩ শতাংশ।

ডলারের সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে গত মাসে প্রবাসী আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। সেই রেশ না কাটতেই পণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির গতি কমার তথ্যও মিলল। তাতে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি খরচ না মেটার যে সংকট, সেটি আরও দীর্ঘ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গত এপ্রিলে ৪৭৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ৫১ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি কমে ২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ৩৮৩ কোটি ডলারের পণ্য, যা টানা ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি মাসে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

মাসওয়ারি হিসাবে রপ্তানির গতি কমলেও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ভালোই আছে। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৮ টাকা ৯০ পয়সা হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি।

পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে। ফলে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অর্থবছর শেষে পণ্য রপ্তানি পাঁচ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের কারণে গত মাসের শুরুর দিকে ৭-১০ দিন শিল্পকারখানায় ছুটি ছিল। সে কারণে রপ্তানি কমবে, সেটি অনুমেয় ছিল। অন্যান্য বছরও এমনটি হয়েছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। তাতে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে দেশে দেশে। জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমেছে। বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিক্রিও কমে গেছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যাশিত ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছে।

মোট পণ্য রপ্তানির সাড়ে ৮১ শতাংশ তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৩ হাজার ৮৫২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে মার্চ ও এপ্রিলে ৫০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি থাকলেও গত মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশে নেমে আসে। শুধু মে মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩১৬ কোটি ডলারের পোশাক।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের বিক্রি কমেছে। তাই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা উৎপাদিত পণ্য নেওয়া পিছিয়ে দিচ্ছে। নতুন ক্রয়াদেশ আসার গতিও কমে গেছে।

পোশাকের পর হোমটেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি গত এপ্রিলে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে। মে মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি সেই ঘরে পৌঁছেছে। তারপরও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে খাতটির রপ্তানি আয় ১০৬ কোটি ডলার। অন্যদিকে হোমটেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি কমাটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার কারণ। ব্যাংক খাত ও খোলা বাজারে ডলারের দামের পার্থক্যের এই সময়ে পণ্য রপ্তানি আয় সঠিক সময়ে আসছে কি না, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংককে তদারকি করতে হবে।

আর গত এক-দুই বছরে যেসব নতুন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আসছে, তাদের ধরে রাখতে হবে রপ্তানিকারকদের। ডলারের কারণে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে তারা। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হলে রপ্তানিও বাড়বে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো