৩ জুন ২০২২, শুক্রবার, ১০:৩৪

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্র

-ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

আজ বা গতকাল এ যুগের সূচনা হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই কোনো না কোনোভাবেই আমরা এই অন্ধকার যুগের চিত্র দেখতে পাচ্ছি। এটা শুরু হয়েছিল ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইন ১৯৭৪ দিয়ে। সে আইনের লক্ষ্য ছিল চোরাচালান, কালোবাজারি, মজুদদারি প্রভৃতি অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল চোরাচালান বা মজুদদারির বিরুদ্ধে এই আইন যতটা না প্রয়োগ করা হয়েছে, তার চেয়ে ফাঁকফোকর গলিয়ে অনেক বেশি প্রয়োগ হয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দলনে। ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কথায় কথায় গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের অথচ শুরুতে এই আইনের সংগে সাংবাদিক ও সম্পাদকরা কোনোভাবেই যুক্ত ছিলেন না। এই আইনে গণকণ্ঠ সম্পাদক কবি আল মাহমুদ, হলিডে সম্পাদক এ. জেড. এম. এনায়েত উল্লাহ খান, স্পোকসম্যান ও মুখপাত্র সম্পাদক ফয়েজুর রহমান, চট্টগ্রামের ইস্টার্ন একজামিনারের সম্পাদক মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত হক কথার সম্পাদক ইরফানুল বারী, বাংলাদেশ অবজারভারের সাব এডিটর গোলাম রাব্বানি প্রমুখকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

স্বাধীনতার পর সরকার সংবাদপত্র তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর খড়গহস্ত হয়ে পড়ে। কথায় কথায় চলতে থাকে সংবাদপত্রের ওপর হামলা। দৈনিক গণকণ্ঠের ওপর হামলা ছিল নিয়মিত। মধ্য রাতে পুলিশ গিয়ে তাদের গ্যালি ভেঙ্গে দিয়ে এসেছে। সুযোগ পেলেই বিনা ওজরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা এর প্রতিবাদ করতে চেয়েছে। প্রতিবাদ করতে যখনই রাস্তায় নেমেছেন তখনই তাদের দেয়া হয়েছে বেধড়ক পিটুনি। তখন সাংবাদিক নেতাদের প্রায় সবাই শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনতেন। তারা এসব ঘটনা নিয়ে তার সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আলোচনাও করেছেন। কিন্তু ফল হয়নি। এদের মধ্যে সবচাইতে সম্মানিত ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন এনায়েত উল্লাহ খান। তার সম্পাদিত ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক হলি-ডে পত্রিকা আন্তর্জাতিক মানের ছিল। সে কথা শেখ মুুজিবুর রহমানের কাছে অজানা ছিল না। তাকেও পাকিস্তানী এজেন্ট রাজাকারের দোসরÑ এসব কথা বলতে আওয়ামী নেতারা কসুর করেনি। আমার ধারণা হয়েছিল যেসব আওয়ামী নেতা তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, তারা সম্ভবত কখনো হলি-ডে পড়েননি কিংবা পড়লেও তার মানে বোঝেননি।

এরপর এক সময় শেখ মুজিবুর রহমান এনায়েত উল্লাহ খানকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় তিনি জনাব খানকে গণভবনে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, আপনার প্রতি যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু আমার করার কিছুই ছিল না, কারণ আমার হাত-পা বাঁধা। এরও জবাব দিয়েছিলেন এনায়েত উল্লাহ খান লিখেই। তিনি লিখেছিলেন হাত-পা যদি বাঁধাই থাকে তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।

সংবাদপত্র বা সাংবাদিক দলনের জন্য তৎকালীন সরকারের কাছে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনই শুধু ছিল না। তিনি নতুন নতুন আইন জারি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল নিউজপ্রিন্ট ক্ষমতা আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী আরো আইন। অর্থাৎ কেউ কোনোভাবেই যাতে সরকারের সমালোচনা করতে না পারে তার নিñিদ্র আয়োজন করা হয়েছিল। যাই হোক তাতে শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় আসিন হয়ে কিন্তু মত দলনের জন্য বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমান এনায়েত উল্লাহ খানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেবার সময় বলেছিলেন, আপনার প্রতি যা ঘটেছে সেজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু দুঃখিত যাতে না হতে হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন নি।

সে সময় সংবাদপত্র জগতে যারা সরকারের দালালি করতেন, তাদের যৌক্তিক লেখার উপযুক্ত জবাব দেবার সাধ সে সময়কার দালাল সাংবাদিকদের ছিলো না। ফলে তাদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ ছিলো গালি-গালাজ কূটনামীতে। ফলে এই দালাল শ্রেণীর কারো কাছে কোনো সম্মান ছিলো না। সাংবাদিক সমাজে তারা এক ধরনের বয়কটের শিকার হয়েছিলেন। লোকজন তাদের খুব একটা মুখোমুখি হতো না। কারণ কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হলে তারা পকেট থেকে একটি চোথা বের করতো। সেটি ছিলো বাকশালের আবেদনপত্র। যারা বাকশালে যোগদান করতে চান না, ঐ চোথা ছিলো তাদের কাছে আতঙ্কের মতো। যোগদান না করলে না জানি কি শর্ত নেমে আসে। তখন এসব চোথাধারীরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বাকশালে যোগদানের আহ্বান জানাতে থাকেন। সেসব ছিলো দুঃসহ দিন। বাকশাল ছিলো একটি রাজনৈতিক দল। অনেকেই স্পষ্ট কথা লিখলেও সরাসরি রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে আগ্রহী ছিলেন না। তারা পড়েছিলেন বেশি বিপদে।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বিপদ আরো বহুগুণে বেড়েছে। এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত সরকার মিডিয়াঘটিত যত আইন পাশ করেছে তা কোনো না কোনোভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দলন করছে। এই যেমন ধরেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইন নিয়েও সরকারের তরফ থেকে নানাবিধ বক্তব্য দেয়া হলেও কার্যত এর লক্ষ্য হলো ভিন্নমত পোষণকারী সাংবাদিকদের দলন করা। আগে এসব আইন প্রয়োগে আদালতে উপস্থিতির যে বিধি ব্যবস্থা ছিলো, এই আইনে তাও নেই। কোনো পুলিশ অফিসারের যদি সন্দেহ হয় যে কোনো ব্যক্তি এই আইন লঙ্ঘনের পরিকল্পনা করছে, তবে তাকে কোনো কারণ না দর্শিয়ে গ্রেফতার করা যাবে। এটি এক ভয়ঙ্কর আইন। শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেই এ ধরনের আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দেশ এই ধরনের আইনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে মানবাধিকার ওতোপ্রোতভাবেই জড়িত। বিশ্বে যারা এই ধরনের আইনের প্রতিবাদ করছেন, তারা সবাই বলছেন, এতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে। সে কারণে এ বছরও বাংলাদেশ মানবাধিকার সূচকে দশ ভাগ পিছিয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসির মূল বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র ও বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এসব ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কোনো আপোষ নাই। মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিক্যাপ তর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নির্বাচন মানবাধিকার ও র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু নির্বাচনটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের জনগণ, সরকার, মিডিয়া সকলে মিলেই নির্বাচনী আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বরাবরের মতো উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে একমত।

আজ বা গতকাল এ যুগের সূচনা হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই কোনো না কোনোভাবেই আমরা এই অন্ধকার যুগের চিত্র দেখতে পাচ্ছি। এটা শুরু হয়েছিল ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইন ১৯৭৪ দিয়ে। সে আইনের লক্ষ্য ছিল চোরাচালান, কালোবাজারি, মজুদদারি প্রভৃতি অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল চোরাচালান বা মজুদদারির বিরুদ্ধে এই আইন যতটা না প্রয়োগ করা হয়েছে, তার চেয়ে ফাঁকফোকর গলিয়ে অনেক বেশি প্রয়োগ হয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দলনে। ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কথায় কথায় গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের অথচ শুরুতে এই আইনের সংগে সাংবাদিক ও সম্পাদকরা কোনোভাবেই যুক্ত ছিলেন না। এই আইনে গণকণ্ঠ সম্পাদক কবি আল মাহমুদ, হলিডে সম্পাদক এ. জেড. এম. এনায়েত উল্লাহ খান, স্পোকসম্যান ও মুখপাত্র সম্পাদক ফয়েজুর রহমান, চট্টগ্রামের ইস্টার্ন একজামিনারের সম্পাদক মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত হক কথার সম্পাদক ইরফানুল বারী, বাংলাদেশ অবজারভারের সাব এডিটর গোলাম রাব্বানি প্রমুখকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

স্বাধীনতার পর সরকার সংবাদপত্র তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর খড়গহস্ত হয়ে পড়ে। কথায় কথায় চলতে থাকে সংবাদপত্রের ওপর হামলা। দৈনিক গণকণ্ঠের ওপর হামলা ছিল নিয়মিত। মধ্য রাতে পুলিশ গিয়ে তাদের গ্যালি ভেঙ্গে দিয়ে এসেছে। সুযোগ পেলেই বিনা ওজরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা এর প্রতিবাদ করতে চেয়েছে। প্রতিবাদ করতে যখনই রাস্তায় নেমেছেন তখনই তাদের দেয়া হয়েছে বেধড়ক পিটুনি। তখন সাংবাদিক নেতাদের প্রায় সবাই শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনতেন। তারা এসব ঘটনা নিয়ে তার সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আলোচনাও করেছেন। কিন্তু ফল হয়নি। এদের মধ্যে সবচাইতে সম্মানিত ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন এনায়েত উল্লাহ খান। তার সম্পাদিত ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক হলি-ডে পত্রিকা আন্তর্জাতিক মানের ছিল। সে কথা শেখ মুুজিবুর রহমানের কাছে অজানা ছিল না। তাকেও পাকিস্তানী এজেন্ট রাজাকারের দোসরÑ এসব কথা বলতে আওয়ামী নেতারা কসুর করেনি। আমার ধারণা হয়েছিল যেসব আওয়ামী নেতা তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, তারা সম্ভবত কখনো হলি-ডে পড়েননি কিংবা পড়লেও তার মানে বোঝেননি।

এরপর এক সময় শেখ মুজিবুর রহমান এনায়েত উল্লাহ খানকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় তিনি জনাব খানকে গণভবনে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, আপনার প্রতি যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু আমার করার কিছুই ছিল না, কারণ আমার হাত-পা বাঁধা। এরও জবাব দিয়েছিলেন এনায়েত উল্লাহ খান লিখেই। তিনি লিখেছিলেন হাত-পা যদি বাঁধাই থাকে তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।

সংবাদপত্র বা সাংবাদিক দলনের জন্য তৎকালীন সরকারের কাছে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনই শুধু ছিল না। তিনি নতুন নতুন আইন জারি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল নিউজপ্রিন্ট ক্ষমতা আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী আরো আইন। অর্থাৎ কেউ কোনোভাবেই যাতে সরকারের সমালোচনা করতে না পারে তার নিñিদ্র আয়োজন করা হয়েছিল। যাই হোক তাতে শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় আসিন হয়ে কিন্তু মত দলনের জন্য বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমান এনায়েত উল্লাহ খানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেবার সময় বলেছিলেন, আপনার প্রতি যা ঘটেছে সেজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু দুঃখিত যাতে না হতে হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন নি।

সে সময় সংবাদপত্র জগতে যারা সরকারের দালালি করতেন, তাদের যৌক্তিক লেখার উপযুক্ত জবাব দেবার সাধ সে সময়কার দালাল সাংবাদিকদের ছিলো না। ফলে তাদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ ছিলো গালি-গালাজ কূটনামীতে। ফলে এই দালাল শ্রেণীর কারো কাছে কোনো সম্মান ছিলো না। সাংবাদিক সমাজে তারা এক ধরনের বয়কটের শিকার হয়েছিলেন। লোকজন তাদের খুব একটা মুখোমুখি হতো না। কারণ কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হলে তারা পকেট থেকে একটি চোথা বের করতো। সেটি ছিলো বাকশালের আবেদনপত্র। যারা বাকশালে যোগদান করতে চান না, ঐ চোথা ছিলো তাদের কাছে আতঙ্কের মতো। যোগদান না করলে না জানি কি শর্ত নেমে আসে। তখন এসব চোথাধারীরা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বাকশালে যোগদানের আহ্বান জানাতে থাকেন। সেসব ছিলো দুঃসহ দিন। বাকশাল ছিলো একটি রাজনৈতিক দল। অনেকেই স্পষ্ট কথা লিখলেও সরাসরি রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে আগ্রহী ছিলেন না। তারা পড়েছিলেন বেশি বিপদে।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বিপদ আরো বহুগুণে বেড়েছে। এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত সরকার মিডিয়াঘটিত যত আইন পাশ করেছে তা কোনো না কোনোভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দলন করছে। এই যেমন ধরেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইন নিয়েও সরকারের তরফ থেকে নানাবিধ বক্তব্য দেয়া হলেও কার্যত এর লক্ষ্য হলো ভিন্নমত পোষণকারী সাংবাদিকদের দলন করা। আগে এসব আইন প্রয়োগে আদালতে উপস্থিতির যে বিধি ব্যবস্থা ছিলো, এই আইনে তাও নেই। কোনো পুলিশ অফিসারের যদি সন্দেহ হয় যে কোনো ব্যক্তি এই আইন লঙ্ঘনের পরিকল্পনা করছে, তবে তাকে কোনো কারণ না দর্শিয়ে গ্রেফতার করা যাবে। এটি এক ভয়ঙ্কর আইন। শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেই এ ধরনের আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দেশ এই ধরনের আইনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে মানবাধিকার ওতোপ্রোতভাবেই জড়িত। বিশ্বে যারা এই ধরনের আইনের প্রতিবাদ করছেন, তারা সবাই বলছেন, এতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে। সে কারণে এ বছরও বাংলাদেশ মানবাধিকার সূচকে দশ ভাগ পিছিয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসির মূল বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র ও বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এসব ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কোনো আপোষ নাই। মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিক্যাপ তর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নির্বাচন মানবাধিকার ও র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু নির্বাচনটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের জনগণ, সরকার, মিডিয়া সকলে মিলেই নির্বাচনী আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বরাবরের মতো উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে একমত।

https://dailysangram.info/post/491066