২ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৬:২৬

পরামর্শক খাতেই মোট ব্যয়ের ১৬.৩৭ শতাংশ

তিন স্থলবন্দর আধুনিকায়ন

কারিগরি প্রকল্প ছাড়াও দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় অংশ যাচ্ছে পরামর্শক ও বিদেশ ট্যুর-প্রশিক্ষণ খাতে। আবার বৈদেশিক ঋণ নিলে ঋণদাতাদের একটা অন্যতম শর্ত থাকে পরামর্শক তাদের থেকে নেয়া এবং সেই খাতে খরচ ঋণের অর্থ থেকেই নির্বাহ করা। দেশের ৯টি বর্ডার ক্রস পয়েন্টের (বিসিপি) সোনা মসজিদ, আখাউড়া ও তামাবিলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং ছয়টির উন্নয়নে বিস্তারিত ডিজাইনের জন্য ৫১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হবে। সাসেক এন্টিগ্রেটেড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন সেক্টর উন্নয়ন প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) নেয়া ঋণে চার্জ গুনতে হচ্ছে পৌনে ১২ কোটি টাকা বলে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত লজিস্টিক পারফরম্যান্স ইনডেক্সে (এলপিআই) গ্লোবাল পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। বিশেষ করে কাস্টমস এবং স্থলবন্দরের পরিচালনা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। সরকারি খাতে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও বিদ্যমান বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বর্ডার ক্রস পয়েন্টগুলোতে বিশ্ববাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসাবান্ধব পরিবেশসহায়ক প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে বর্তমানে ২৪টি স্থানে বিসিপি এ স্থলবন্দর রয়েছে। এসব বিসিপিতে কাস্টমস অফিসগুলোতে কারগো ট্রানশিপমেন্ট এবং সংরক্ষণ সুবিধার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। কাস্টমস অফিসগুলো আন্তর্জাতিক কার্গো পরিচালনা করার সক্ষমতাও অপর্যাপ্ত। এই ২৪টি বিসিপিতে কোনো সমন্বিত ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাও বিদ্যমান নেই। বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় বাংলাদেশের বিসিপিগুলোতে কার্গো পরিচালনা এবং কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সমন্বিতভাবে করা প্রয়োজন। সেই বিবেচনায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য এডিবির ঋণে ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় গতকাল। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ প্রকল্পটির উদ্যোগী বিভাগ আর এটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চার বছর তিন মাসে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। আগামী ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। প্রকল্পে এডিবি থেকে তিন কোটি ১০ লাখ ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ২৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে। যার জন্য ফাইন্যান্সিং চার্জ গুনতে হব ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো, আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল কাস্টমস স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণ, কাস্টমস স্টেশনগুলোর জন্য মোট ১৪৫ সেট যন্ত্রপাতি কেনা, কাস্টমস স্টেশনগুলোর জন্য ৯৬ সেট আইসিটি যন্ত্রপাতি কেনা, ১১২ সেট প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কেনা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ অডিট ও ডিটেইল ড্রইং ও ডিজাইনের জন্য ৭৭১ জনমাস পরামর্শক সেবা কেনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য ৬৮ সেট জিনিসপত্র কেনা এবং এডিবিকে সুদ বাদ অর্থ পরিশোধ করা।

প্রকল্পে ব্যয় খাত পর্যালোচনায় দেখা যায়, অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ও পরামর্শক-সুদ খাতে খরচ প্রায় কাছাকাছি। অবকাঠামো খাতে তিনটিতে ব্যয় হবে ৮৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর পরামর্শক খাতে ৫১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও এডিবির সুদ-চার্জ ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মিলে মোট ৬৩ কোটি টাকা। পরামর্শকে প্রতি জনে মাসে গড় ব্যয় সাড়ে ছয় লাখ টাকার বেশি।

রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বাকি ছয়টি বিসিপির জন্য ডিজাইন ও ড্রইং করা হবে। সেটা অনুযায়ী আগামী দ্বিতীয় পকল্প প্রণয়ন ও প্রস্তাব করা হবে। তাই পরামর্শক খাতে খরচটা বেশি।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে বর্তমানে ১২টি চালু আছে। আর এগুলো হলোÑ বেনাপোল, বুড়িমারী, আখাউড়া, ভোমরা, নাকুগাঁও, তামাবিল, সোনাহাট, সোনামসজিদ, হিলি, বাংলাবান্ধা, টেকনাফ, বিবিরবাজার।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে দেশের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। এসব ধাপে ধাপে করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সোনামসজিদ, আখাউড়া ও তামাবিল কাস্টমস স্টেশনের সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব হবে।

প্রকল্পের ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সাব-রিজিওনাল অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য আমাদের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন জরুরি। তাই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এই প্রকল্পটি। ধাপে ধাপে বাকিগুলোর উন্নয়ন করা হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি স্থলবন্দরকে ডিজিটালাইজেশন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সব কিছু আপডেট করতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/667466