২ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৬:২৩

নীতিমালা শিথিলের পরও ১১ মাসে প্রবাস আয় কমেছে ১৬ শতাংশ

কোনো কাগজপত্র ছাড়াই যত খুশি তত রেমিট্যান্স আনা যাবে। এতে বর্ধিত হারে অর্থাৎ আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেতেও কোনো বাধা থাকবে না। প্রবাস আয় আনতে নীতিমালা শিথিলের পরও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাস আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। আর একক মাস হিসেবে মে মাসে কমেছে সোয়া ১৩ শতাংশ। শুধু তাই নয়, আগের মাস এপ্রিলের তুলনায়ও প্রবাস আয় কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত মার্চ মাস থেকে ডলার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করেও বর্ধিত চাহিদার সমন্বয় করা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে। এরই প্রেক্ষিতে চাহিদার সাথে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর জন্য সরকার প্রবাস আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে মোতাবেক গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে রেমিট্যান্স পাঠানোর নীতিমালা শিথিল করে দিয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে যত খুশি তত রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আগে ৫০ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাতে হলে বৈধ কাগজপত্র পাঠাতে হতো। এ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হতো। এখন বলা হয়েছে, যত খুশি তত রেমিট্যান্স পাঠানো যাবে। এমনকি আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেতেও কোনো অসুবিধা হবে না। এমন নির্দেশনা দেয়ার পরও রেমিট্যান্স বাড়েনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালা শিথিলের সুফল চলতি জুন মাস থেকে পাওয়া যাবে। কারণ সামনে ঈদুল আজহা। এমনিতেই ঈদ কেন্দ্রিক রেমিট্যান্স বেড়ে যায়। এর ওপর নীতিমালা শিথিলের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে বড় সহায়তা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর বিপরীত চিত্রও উল্লেখ করেছেন কিছু ব্যাংকার। তাদের মতে, ডলারের দাম ৯৮ টাকা উঠে গিয়েছিল। আর খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০৩ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের একক হার বেঁধে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আমদানিতে ডলার সর্বোচ্চ বিক্রি করা যাবে ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা দরে। আর আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করা যাবে ৮৯ টাকা দরে। এখন একক দর নির্ধারণ করায় ব্যাংকগুলো বেঁধে দেয়ার দরের চেয়ে বেশি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে না। ডলার দাম বেঁধে দেয়ার প্রভাব রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে সোয়া ১৩ শতাংশ। অন্য দিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৯১৯ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল দুই হাজার ২৮৩ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। ১১ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৬ শতাংশের মতো। এদিকে গত এপ্রিলের চেয়েও প্রবাস আয় কমেছে গত মে মাসে। গত এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। এপ্রিলের তুলনায় কম এসেছে প্রায় ১৩ কোটি ডলার।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/667448