১ জুন ২০২২, বুধবার, ১০:৫২

বেপরোয়া ছাত্রলীগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাংবাদিকও

সারা দেশে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল ও মতের লোকের সাথে বহুবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংঘর্ষগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা বেপরোয়া ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোনো সময় পুলিশ নিয়ে আবার কোনো সময় পুলিশ ছাড়াই বিরোধী মত দমনে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাদের এই আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি সংবাদকর্মীরাও। গত কয়েক মাসে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের হাতেই বিভিন্নভাবে হামলা এবং মারধরের শিকার হয়েছেন অসংখ্য সাংবাদিক।

এ প্রসঙ্গে ঈদের আগে ও পরের কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া যায়। গত ২৯ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের টিভি রুমে সিগারেট না খেতে অনুরোধ করায় একজন ক্যাম্পাস রিপোর্টারকে হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও তার অনুসারী মারধর করে ওই সাংবাদিকের নাম শাহাবুদ্দিন ইসলাম। তিনি বিডি মর্নিংয়ের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের সময় সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আবির আহমেদ। শুধু মারধরই নয়, তার ফোনও ছিনতাই করে নেয় দলটির নেতাকর্মীরা। তিনি সে সময় সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও লাইভ করছিলেন। এই হামলায় ড. মুহ্ম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহাম্মদের নেতৃত্বে হল ছাত্রলীগ এবং ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সামাদ আজাদ জুলফিকারের নেতৃত্বে কলেজ ছাত্রলীগ ও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।

এর আগে গত ১৮ ও ১৯ এপ্রিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের হামলার শিকার হন- আজকের পত্রিকার রিপোর্টার আল আমিন রাজু, ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার প্রবীর দাস, ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জসীম উদ্দীন মাহির, মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদক ইকলাচুর রহমান, বাংলা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাহেদ শফিক, দীপ্ত টিভির প্রতিবেদক আসিফ সুমিত, এসএ টিভির প্রতিবেদক তুহিন, ক্যামেরাপারসন কবির হোসেন, আরটিভির ক্যামেরা পারসন সুমন দে, মাই টিভির প্রতিবেদক ড্যানি, জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদুজ্জামান তন্ময় ও মানবজমিনের ফটোসাংবাদিক জীবন। ওই সংঘর্ষ শিক্ষার্থী বনাম ব্যবসায়ী বলা হলেও সেটা মূলত ছিল ছাত্রলীগ ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ। ১১ জন সাংবাদিকের মধ্যে পাঁচজনেরও বেশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আঘাতে আহত হন। আহত সাংবাদিকরা জানান, তারা শুধু মারধরের শিকারই হননি বরং অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ ও করা হয় তাদের।

ছাত্রলীগের হঠাৎ এমন বেপরোয়া আচরণের পেছনে সংগঠনটির আসন্ন সম্মেলন পেছানোর পায়তারা বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ। নেতারা বলেন, ৩০তম সম্মেলনের নির্দেশনা আসার পর থেকেই হুট করে এমন অরাজকতা শুরু হলো। শান্ত ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করা হলো এ রকম হওয়ার তো কোনো কথা ছিল না। শুধুমাত্র পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে দিয়ে সম্মেলন পেছানোর ষড়যন্ত্র ছাড়া এটা আর কিছুই হতে পারে না।

এদিকে সাংবাদিকদের সমালোচনা করে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক মানববন্ধনে বলেন, সাংবাদিকরা একপক্ষীয় সংবাদ পরিবেশন করে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের ওপরই দোষ চাপাচ্ছে। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ স্বরূপ গত ৩০ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে তাকে ডাকেন সমিতির নেতারা। সেখানে আল নাহিয়ান খান জয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সাথে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় হয়। মতবিনিময় সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি, পরবর্তীতে কোনো সংঘর্ষ ঘটলে বা সে রকম কোনো পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হবে না বলে নিশ্চিত করেন এবং এ বিষয়ে শিগগির সারা দেশের দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। এ ছাড়াও কোনো নেতাকর্মী অতি উৎসাহী হয়ে এ রকম কাজ করে তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/667226