৩১ মে ২০২২, মঙ্গলবার, ১:০৫

দাবি আদায়ে সোচ্চার হচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা

পদ সংরক্ষণের দাবিতে এও পিওদের বৈঠক; পে-স্কেলের জন্য প্রতিমন্ত্রীর সাথে ঐক্য ফোরামের বৈঠক

নতুন পে-স্কেলসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে সোচ্চার হচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। দাবি-দাওয়াগুলো গত কয়েক বছর ধরে করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি সরকার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার কিছুটা নরম হয়ে তাদের দাবিতে সাড়া দিতে পারে এমন প্রত্যাশায় তারা মাঠে নেমেছেন। নিজেদের পদপদবি সংরক্ষণের দাবিতে গতকাল সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সাথে বৈঠক করেছেন সচিবালয়ে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা (পিও)। একই দিন বিকেলে নতুন পে-স্কেলসহ সাত দফা দাবিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি বাস্তবায়ন ঐক্য ফোরাম। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের আরো কয়েকটি সংগঠন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সাথে বৈঠকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বনি¤œ ২৫ হাজার টাকা বেতন ও নবম জাতীয় পে-কমিশন গঠনসহ সাত দফা দাবিতে দুই বছর থেকে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি বাস্তবায়ন ঐক্য ফোরাম। বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শেষে গত ২২ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ৩ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। মহাসমাবেশের আগে গতকাল বিকেলে মন্ত্রণালয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন সংগঠনটির নেতারা। সাক্ষাৎকালে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ^াস দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।

দাবিগুলো হলো, ১৯৭৩ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের অনুরূপ ১০ (দশ) ধাপ বিশিষ্ট বেতন স্কেল নির্ধারণ-পূর্বক ছয় সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের ব্যয় বিবেচনায় সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা করা এবং এ জন্য নবম জাতীয় পে-কমিশন গঠন, নবম পে-স্কেল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান, শতভাগ পেনশন প্রদান, স্বেচ্ছায় অবসরে চাকরির বয়সসীমা ২০ বছর নির্ধারণ এবং আনুতোষিক প্রতি ১ টাকায় ৩০০ টাকা নির্ধারণ, পে-কমিশনে কর্মচারীর প্রতিনিধি রাখা, সচিবালয়ের মতো সচিবালয়ের বাইরে সকল দফতর/অধিদফতরের কর্মচারীদের পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণী ও সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার পদমর্যাদা প্রদান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান।

ব্লক পদ প্রথা প্রত্যাহার, পদোন্নতিযোগ্য পদ শূন্য না থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর উচ্চতর পদের বেতন স্কেল প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদের যৌক্তিকভাবে ঝুঁকিভাতা প্রদান, আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রথা বিলুপ্ত করা, ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ৫% এর পরিবর্তে ২০% এ উন্নীত করা, টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড, টেকনিক্যাল কর্মচারীদের জন্য দু’টি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট পুনর্বহাল, এলাকা ভেদে ৭০%-১০০% হারে বাড়িভাড়া ভাতা, সামঞ্জস্যপূর্ণ চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা, যাতায়াত ভাতা প্রদান, ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের বিনা সুদে ২৫-৩০ লাখ টাকা গৃহঋণ সুবিধা প্রদান এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল বাবদ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা প্রদান।

উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের চাকরি শুরু থেকে গণনা, অযাচিত ২০% হারে পেনশন কর্তনের হয়রানি বন্ধ করা, ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য সব নিয়োগে ৩০% পোষ্য কোটা সংরক্ষণ, অফিসার্স ক্লাব, বিএমএ, কেআইবি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মতো চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য রাজধানীতে একটি কর্মচারী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ এবং অধঃস্তন আদালতের কর্মচারীদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক হেদায়েত হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলী, সমন্বয়ক আকতার হোসেন, মাহমুদুল হাসান, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এর আগে সকালে এক-তৃতীয়াংশ পদ সংরক্ষণের দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সাথে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা। সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) পদ আনুপাতিক হারে সংরক্ষণের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। গত ২৫ এপ্রিল সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) পদ সংরক্ষণের বিষয়ে মত দিতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটি গঠনের এক মাস পর গতকাল সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অণুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের কক্ষে এ-সংক্রান্ত বৈঠক হয়।

বাংলাদেশ সচিবালয় সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) কল্যাণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এফ এম তৌহিদুল আলম বলেন, ‘প্রাপ্যতা অনুযায়ী পদ সংরক্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। জনপ্রশাসন সচিব ও প্রতিমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে ফাইল ফেলে রেখেছেন। এতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।’

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি বাস্তবায়ন ঐক্য ফোরামের সমন্বয়ক আকতার হোসেন বলেন, জীবন-ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত আমাদের দেশের প্রচলিত প্রথা। এরই মধ্যে গত দুই বছরে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য। ফলে নি¤œ বেতনভুক কর্মচারীরা দিশেহারা। ২০১৫ সালে ঘোষিত বেতন স্কেলে শুভঙ্করের ফাঁকির মধ্যে ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে ঠকানো হয়েছে, বৈষম্যে নিপতিত করা হয়েছে। এতে কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য, আর্থিক দৈন্যসহ সার্বিক বিষয় নিরসনের জন্য বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন থেকে সরকারের কাছে বিভিন্ন সময়ে দাবি পেশ করা হলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। আশা করছি সরকার আমাদের সমস্যা বিবেচনা করে শিগগিরই ব্যবস্থা নিবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/666977