৩০ মে ২০২২, সোমবার, ১১:৩৮

ঢাবি প্রশাসন কোথায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত সপ্তাহে দুই দফা সংঘর্ষে প্রশাসন আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারতো বলেও মত শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকের। গত মঙ্গলবার ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলন করার উদ্দেশ্যে আসার সময় তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। সেদিন দুপুরে আরেক দফা সংঘর্ষে জড়ায় এই দুই ছাত্র সংগঠন। সেদিন ছাত্রলীগের অনেকের হাতে রড, হকিস্টিক, চাপাতি দেখা গিয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের সময় বাঁশ, লাঠিসোটা ছিল ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হাতেও। সেদিনের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছিল। এ সময় একদল দুষ্কৃতকারী লাঠি, রড ও নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগের সামনে এক জোট হয়ে নির্বাচন বানচাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করতে অপতৎপরতা শুরু করে। বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানালে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখান থেকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দাবি এজাহারে উল্লিখিত তথ্য সত্য নয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালালেও এজাহারে পরোক্ষভাবে ছাত্রদলের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। মামলা করলেও কাদের হাতে সেদিন রড, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র ছিল সেটি শনাক্তে প্রশাসনের কোনো ধরনের তৎপরতা চোখে পড়েনি। এরপর গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট এলাকা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও মহানগর শাখার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে যোগ দেয়। এ সময় তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে রড ও লাঠিসোটার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতেও দেখা যায়। এদিন ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মী গুরুতরভাবে জখম হয়। সেদিনের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মামলা বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য- সেদিন ‘বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়’ কোনো ধরনের সংঘর্ষ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরঙ্গনে হাইকোর্ট এলাকায় হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান মানবজমিনকে বলেন, ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

রড, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র যাদের হাতেই ছিল তারা যে দলেরই হোক না কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল তাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেকখানি দূরে সরে গেছে উল্লেখ করে এই অধ্যাপক এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রাজনৈতিক রূপ ধারণ করাকে দায়ী করেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. গোলাম রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। এর আগে তিনি মানবজমিনকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলায় দুষ্কৃতকারীদের আসামি করা হয়েছে। কোনো সংগঠনকে অভিযুক্ত করা হয়নি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করবে।

https://mzamin.com/news.php?news=5210