৩০ মে ২০২২, সোমবার, ১১:৩৭

ডলার–সংকট

প্রবাসী আয় ধরতে ডলারের দাম নিয়ে প্রতিযোগিতা

২৬ মে পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। এপ্রিলে এসেছিল ২০০ কোটি ডলার।

ইসলামী ব্যাংকের পরই রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো একসময় প্রবাসী আয় সংগ্রহে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডলার–সংকটে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। কারণ, বেসরকারি ব্যাংকগুলো যে দামে প্রবাসী আয় এনেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো সেই দাম দিতে পারেনি। ফলে তাদের প্রবাসী আয় কমেছে।

শুধু রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক নয়, প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ডলারের বাড়তি দাম না দেওয়ায় শুরুতে ইসলামী ব্যাংকের প্রবাসী আয়ও কমে যায়। অথচ প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও পরে ডলারের দাম বাড়িয়ে শীর্ষ স্থানটি ফিরে পায় ব্যাংকটি।

প্রবাসী আয় ধরতে ডলারের দাম নিয়ে প্রতিযোগিতা
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংক ডলারের বাড়তি দাম দিয়ে যে প্রবাসী আয় এনেছে, তার বড় সুবিধাভোগী এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। শুরুতে ডলারের কম দাম দেওয়ার আমরা খুব বেশি প্রবাসী আয় পাইনি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মে পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় আসে ১৬৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। গত এপ্রিলে আয় এসেছিল ২০০ কোটি ডলার। মার্চে এসেছিল ১৮৫ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসে ১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। একই সময়ে ৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। পরে অবশ্য ইসলামী ব্যাংক আবারও প্রথম স্থান ফিরে পায়।

প্রবাসী আয় সংগ্রহে ব্যাংকগুলো অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বিদেশে সংযোগ বাড়িয়েছে। আবার দেশের মধ্যে দ্রুত প্রবাসী আয় বিতরণে ব্যাংক শাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কার্যক্রম বাড়িয়েছে। যেই ব্যাংক যত বেশি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে, সেই ব্যাংকের প্রবাসী আয় তত বেড়েছে।


জানা গেছে, চলতি মাসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আয় আসে ২৯ কোটি ৭১ লাখ ডলার, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ কোটি ২২ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার ও সাউথইস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার ও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি ব্যাংক হওয়ায় আমরা ডলারের বাড়তি দাম দিয়ে প্রবাসী আয় আনতে পারিনি। এই কারণে আমাদের প্রবাসী আয় কমে গেছে।’

দেশীয় ব্যাংক ও বিদেশের বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউস সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইস্টার্ণ ব্যাংকে ডলারের দাম ছিল ৯২ টাকা, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকে ৯৩ টাকা ৩৪ পয়সা, উত্তরা, পূবালী, অগ্রণী ও এনআরবি ব্যাংকে ৯৫ টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৯৬ টাকা ২৫ পয়সা ও ব্র্যাক ব্যাংকে ৯৭ টাকা।

তবে ব্যাংকগুলো কত দামে আয় আনতে পারবে, তার কোনো নির্ধারিত দর বা সীমা নেই। সাধারণত দেশের ব্যাংকগুলো বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর কাছে প্রতিদিন ডলারের চাহিদা ও দাম নির্ধারণ করে দেয়। আবার অনেক সময় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলারের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করে। যে ব্যাংক বেশি দাম দেয়, সেই ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা হয়। ব্যাংক খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। গতকাল রোববার থেকে তা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা করা হয়েছে।

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভারতেও এভাবে দর বেঁধে দেওয়া হয়। তবে খোলাবাজারের সঙ্গে পার্থক্য বেশি হয়ে গেলে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় কেমন আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে সব ব্যাংক এক দাম দিলে ডলারের বাজার শৃঙ্খলার মধ্যে থাকবে। তাতে সংকট থাকবে না।

 

সূত্রঃ প্রথম আলো