২৯ মে ২০২২, রবিবার, ৭:৪৬

তিন অর্থবছরে বিদেশী ঋণ শোধে ব্যয় বাড়বে ৬৫%

পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি

বিদেশী ঋণ ও সুদ পরিশোধে আগামী তিন অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে ৬৫ শতাংশ। পরবর্তী তিনটি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ (আসল ও সুদ) পরিশোধেই সরকারকে ব্যয় করতে হবে এক হাজার সাত কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকারও বেশি।

আগামী তিন অর্থবছরে বিদেশী ঋণের মূল পরিশোধে ব্যয় হবে ৭১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং সুদ পরিশোধে খরচ হবে ২৯৫ কোটি ডলার। সম্প্রতি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের এ হিসাব প্রাক্কলন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, বাজেট ঘাটতির অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ প্রতি বছর জিডিপি’র প্রায় ২.৫ শতাংশ ব্যয় হয়। এ খাতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ওঠানামা না থাকলেও প্রতি বছর এই খাতে ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেশ পরিমাণ বাড়বে বলে শঙ্কা রয়েছে।

ইআরডি’র প্রাক্কলনে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ২৪৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে মূল ঋণের পরিমাণ ১৭২ কোটি ডলার এবং সুদের পরিমাণ হচ্ছে ৭২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

অর্থ বিভাগের হিসেবে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে টাকার অঙ্কে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ছয় হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে টাকার অঙ্কে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় বাড়তে পারে।

ইআরডি’র প্রাক্কলনে দেখা যায়, আগামী ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ (মূল ও সুদ) পরিশোধে মোট ব্যয় হবে যথাক্রমে ২৭৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ৩২৮ কোটি ডলার এবং ৪০২ কোটি ডলার। এর মধ্যে বৈদেশিক মূল ঋণ পরিশোধে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩০ কোটি ডলার এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৮৭ কোটি ডলার ব্যয় হবে।
অন্য দিকে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২ কোটি ডলার, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৮ কোটি ডলার এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১৫ কোটি ডলার ব্যয় হবে।

এ বিষয়ে ইআরডি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদেশী ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। আগামীতেও এ ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে না। তবে বিদেশী ঋণ ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই ঋণ যেন অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার না করা হয়। কারণ যে বিনিয়োগে রিটার্ন আসে না, সেখানে বিদেশী ঋণ ব্যবহার করা হলে ঋণের ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তখনই সৃষ্টি হয় ঝুঁকির। তাই আমাদের বিদেশী ঋণে প্রকল্প হাতে নেয়ার সময় আগামীতে আরো সতর্ক থাকতে হবে।

এ দিকে অর্থ বিভাগের প্রকাশিত মধ্যময়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বহিঃঅর্থায়নের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় ছিল সরকারি ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ এবং বহিঃঅর্থায়নের বিপরীতে অন্তর্নিহিত সুদ হার ছিল গড়ে মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। বাইরের উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বহিঃঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় সামান্য বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, মোট বৈদেশিক ঋণ (মূল ও সুদ) পরিশোধের তুলনায় অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় অনেক বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ঋণের (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৬২ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ছয় হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আগামী ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে মোট ব্যয় হবে যথাক্রমে ৭৭ হাজার ৫৫ কোটি টাকা এবং ৮৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৬৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং ৭১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ পাঁচ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে সংশোধিত বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ পাঁচ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৫৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ চার হাজার ৩১৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।


https://www.dailynayadiganta.com/first-page/666461