২৮ মে ২০২২, শনিবার, ১০:৪৯

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্জিমাফিক ফি আদায়

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নির্ধারণে নেই কোনো নীতিমালা। ফলে মর্জি মতো আদায় করছে টিউশন ফি। এই ফির যৌক্তিকীকরণ চেয়ে সুপারিশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু তা সুপারিশেই সীমাবদ্ধ। দেখেনি আলোর মুখ।

বর্তমান সময়ে ব্যবসায় প্রশাসন বা বিবিএ শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হন এই বিষয়ে। কিন্তু ভর্তির সময়ে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে গুনতে হয় বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে (ইউল্যাব) অধ্যয়ন করতে চাইলে গুনতে হবে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭০০ টাকা। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) বিবিএ’তে পড়তে চাইলে গুনতে হবে ৬ লাখ ১৩ হাজার ৪৫০ টাকা। একই বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য অর্থের পার্থক্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার।

একই বিষয়ে পড়তে হলে গুনতে হবে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ১২০ টাকা, সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটিতে ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে লাগবে ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে লাগবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেয়ার ক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নানা অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের নির্দেশনা না থাকার সুযোগে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ফি নির্ধারণ করছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যাংকে পড়ে রয়েছে। তার মানে তারা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি হারে ফি আদায় করছে। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফির বাইরেও বিভিন্ন খাতে মোটা অঙ্কের ফি নির্ধারণ করছে। কমিশন চায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফির বিষয়টি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে।

ইউজিসি সর্বশেষ প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ উল্লেখ করেছে। সুপারিশে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি ও টিউশন ফি নিয়ে ভিন্নতা ও অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করার ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চহারে ফি নিয়ে থাকে। এমনকি কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই প্রতি বছর টিউশন ও ভর্তিসহ অন্যান্য ফি বাড়ানোর অভিযোগও মেলে। যেহেতু দেশের সব অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা সমান নয়, সেহেতু শিক্ষার্থীদের প্রদেয় বিভিন্ন ফি ও চার্জ একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিতে পারে।

কিন্তু সুপারিশের পর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও নেই কোনো উদ্যোগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই সুপারিশের বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনাও হয়নি।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে এই ফি যৌক্তিকীকরণ চালু রয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাকিব হাসান অধ্যয়নরত অস্ট্রেলিয়ার পার্থ ইউনির্ভাসিটিতে। তিনি বলেন, এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন র‌্যাঙ্কিং করা আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে র‌্যাঙ্কের শীর্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের ফি রাখতে পারে ১০০ টাকা। এভাবে র‌্যাঙ্কিং কমে গেলে তারা রাখবে ৯০ টাকা, আরও নিচের র‌্যাঙ্কে যারা তারা রাখবে ৮০ টাকা। এমনকি শিক্ষার্থী ভর্তির সময় যে র‌্যাঙ্কিং থাকবে তা থেকে এগিয়ে গেলেও পূর্বের অর্থই দিতে হবে। কিন্তু পিছিয়ে গেলে দিতে হবে কম অর্থ।

একই কথা বলেন সুইডেনের লান্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তমা চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ নির্ভর করে র‌্যাঙ্কিংয়ের ওপর। ফলে শিক্ষার্থীরা অর্থ বুঝে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। আর বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো মনগড়া ফিও রাখে না তারা। নির্ধারণ করে দেয়া আছে প্রশাসন থেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমরা চাই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক বিধি-বিধান মেনে চলুক। তবে অনেক সময় বাজেট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসে। একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় হলেও একেক জায়গায় একেক নিয়ম অনুসরণ করতেও দেখা যায়। তাই আমরা একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছি।

https://mzamin.com/news.php?news=4924